পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। একের পর এক লেনদেনে সূচকের পতনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপরীতে শাপলা চত্বরে হাজারো বিনিয়োগকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের হতাশা প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে তাদের অপসারণের দাবি করেন।
বিক্ষোভে উত্তপ্ত মতিঝিল
দুপুর আড়াইটার দিকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা প্রথমে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন। সেখানে তারা নানা স্লোগানে শাসক সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে বিকেল ৩টার দিকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এই বিক্ষোভের আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির নেতৃত্বে থাকা বিনিয়োগকারীরা জানান, তারা পুঁজিবাজারে চলমান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত ক্ষতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
“নতুন চেয়ারম্যান অযোগ্য”—বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ
বিক্ষোভে উপস্থিত একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, “বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কোনো প্রশাসনিক দক্ষতা নেই। তার অধীনে বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে না। বরং বাজার ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমাদের পুঁজি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মনোবলও ভেঙে পড়েছে।”
তারা আরও বলেন, প্রতিদিনের দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ‘ফোর্সড সেল’ করা হচ্ছে, যার ফলে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন। অনেকে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
কুশপুতুল দাহ করে ক্ষোভ প্রকাশ
বিক্ষোভ শেষে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কুশপুতুল দাহ করেন। এই প্রতীকী প্রতিবাদে তারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই নেতৃত্বে বাজারের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক। তিনি বলেন, “রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণ বেড়েছে। তার নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী ফোর্সড সেলের শিকার হয়ে সব হারিয়েছেন। বাজারে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা চাই এই ব্যর্থ নেতৃত্ব দ্রুত পরিবর্তন হোক। না হলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি
বিক্ষোভকারী বিনিয়োগকারীরা সরাসরি সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এবং অর্থ উপদেষ্টাকে দ্রুত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। আমরা চাই পুঁজিবাজারের প্রতি সরকারের আগ্রহ ও সহানুভূতি থাকুক। আমাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমরা বিনিয়োগ করি। এখন এই বাজারের পতনে আমাদের পরিবার বিপর্যস্ত।”
ধারাবাহিক পতনের পেছনে কারণ কী?
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারের এই ধারাবাহিক পতনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- সুশাসনের অভাব,
- লভ্যাংশ না পাওয়া,
- প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা,
- আইপিও নিয়ে জটিলতা,
- অব্যবস্থাপনা এবং অযোগ্য নেতৃত্ব।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। এ ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অর্থনৈতিক নীতিমালায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।”
সরকার কী বলছে?
সরকারিভাবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি আসেনি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান পরিস্থিতি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে বিএসইসিতে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিনিয়োগকারীদের এ বিক্ষোভকে “সংগঠিত অপপ্রচার” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, “বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে কিছু সময় প্রয়োজন।”