ড্যাপের কারণে আবাসন ও সংযোগ শিল্পে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে: রিহ্যাবের দাবি

ঢাকা শহরের ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা’ বা ড্যাপ (Detailed Area Plan)-এর কারণে আবাসন খাত ও সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০০ সংযোগ শিল্প আজ সংকটে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার বৈষম্যমূলক প্রয়োগের ফলে আবাসন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে রড, সিমেন্ট, ইট, কেবল, লিফট, রং, থাই, স্যানিটারি সামগ্রীসহ প্রায় ২০০ সংযোগ শিল্পে, যেখানে ৪০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর্মরত।
ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) কমে যাওয়ায় উন্নয়ন বন্ধ
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি জানান, ড্যাপে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) কমিয়ে দেওয়ায় ভবন নির্মাণে উচ্চতা ও আয়তন সংকুচিত হয়ে গেছে। এর ফলে জমির মালিকেরা আর আবাসন কোম্পানিকে জমি দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না, ফলে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
তিনি বলেন, “২০২২ সালে ড্যাপের প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর থেকে জমির মালিকদের আগ্রহ কমে যায়, কারণ লাভজনক ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে আবাসন খাত যেমন থেমে গেছে, তেমনি সেই খাতে জড়িত ২০০ সংযোগ শিল্পও ব্যবসা হারাচ্ছে।”
রড, সিমেন্ট, ইট—সব উপকরণের চাহিদা অর্ধেকে
রিহ্যাব সভাপতি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “নির্মাণে রড সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কিন্তু বর্তমানে তার চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই অবস্থা সিমেন্ট, ইট, টাইলসসহ অন্যান্য উপকরণেও।”
চাহিদা কমার ফলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রোডাকশন স্কেল ডাউন করেছে এবং বহু শ্রমিককে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দিল্লি বনাম ঢাকা: FAR নিয়ে তুলনা
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, “দিল্লিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৬২ জন মানুষ বসবাস করে, অথচ সেখানে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) বেশি। কিন্তু ঢাকায় যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১১৯ জন মানুষ বাস করেন, সেখানে FAR কম রাখা হয়েছে—যা বাস্তবতাবিবর্জিত।”
তিনি বলেন, “ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে কম জায়গায় বেশি FAR প্রয়োজন, যাতে উচ্চ ভবন নির্মাণ করে জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।”
শিল্প নেতাদের উদ্বেগ
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—
- বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম
- বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ
- রিহ্যাব সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রমুখ
তাঁরা বলেন, সংযোগ শিল্পের সংকট শুধু একটি খাত নয়—জাতীয় অর্থনীতির গতিশীলতা থমকে যাচ্ছে। এই শিল্পগুলো বন্ধ হলে বহু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে, রাজস্ব কমে যাবে এবং জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রিহ্যাবের দাবি ও সরকারের প্রতি আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন—
“অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে হলে অবশ্যই আবাসন ও সংযোগ শিল্পের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এজন্য ড্যাপ ও নির্মাণ বিধিমালার বৈষম্য দূর করে বাস্তব সম্মত এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।”
রিহ্যাবের পক্ষ থেকে একটি লিখিত দাবিনামা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও রাজউক বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
আবাসন খাত কেবল নির্মাণশিল্প নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চাকরির বাজার, শিল্প উৎপাদন, ও নগর উন্নয়নের একটি মেরুদণ্ড। ড্যাপকে কেন্দ্র করে এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা তৈরি হলে তা মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) থেকে শুরু করে ব্যক্তিপর্যায়ের জীবনযাত্রা—সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।