নতুন পার্টনারশিপে বাংলাদেশের বাজারে শক্তি যোগ করলো রক এনার্জি ও ক্যাস্ট্রল

বিশ্বখ্যাত লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড ক্যাস্ট্রল (Castrol) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রক এনার্জি লিমিটেডকে তারা বাংলাদেশে তাদের অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর (বিতরণকারী) হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে ক্যাস্ট্রলের প্রিমিয়াম মানের অ্যাল মেশিন ও অটো-মোটরয়েল অয়েল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড গ্রিস, গিয়ার অয়েল সহ সব প্রোডাক্ট লাইন খুচরা আফটারমার্কেটে আরও সহজে এবং দ্রুত সরবরাহ করা যাবে।
ক্যাস্ট্রল–রক এনার্জি পার্টনারশিপ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- স্থাপনার ঐতিহ্য: ক্যাস্ট্রল ২০০১ সালে প্রথম বাংলাদেশে পা রাখে। তখন থেকে তারা কিন্তু বাজারে নিজেদের একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
- অণুপ্রযুক্তির অগ্রগতি: ক্যাস্ট্রল বিশ্বব্যাপী পরিচিত তাদের পুরোপুরি সিন্থেটিক এবং হাইব্রিড লুব্রিক্যান্ট উদ্ভাবনের জন্য, যা ইঞ্জিন লাইফ, জ্বালানি দক্ষতা ও পরিবেশগত সংরক্ষণে সহায়ক।
- রক এনার্জির সক্ষমতা: ১৯৯০-এর দশক থেকে তেল ও গ্যাস খাতে অভিজ্ঞ রক এনার্জি বাংলাদেশজুড়ে বিস্তৃত ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। দেশব্যাপী সব বিভাগীয় শহরে তাদের শাখা ও রিপ্রেজেন্টেটিভ রয়েছে।
ক্যাস্ট্রল সাউথ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট কেদার লেলে বলেন,
“রক এনার্জির মতো দীর্ঘমেয়াদি অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ত পার্টনারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা বাংলাদেশের ডিসট্রিবিউশন চেইনকে আরও শক্তিশালী করতে পারব। খুচরা গ্রাহক থেকে বড় কর্পোরেট ক্লায়েন্ট, সবাই এখন ক্যাস্ট্রল পণ্য আরও সহজে পাবে।”
রক এনার্জি লিমিটেডের এমডি তানজিম চৌধুরী যোগ করেন,
“ক্যাস্ট্রলের বিশ্বমানের লুব্রিক্যান্ট আমাদের ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমরা বাংলাদেশে অটোমোটিভ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে আমাদের উপস্থিতি আরও মজবুত করব। ঢালাই কারখানা, রেলের মালবাহী বগি, পোল্ট্রি মিল থেকে শুরু করে এক্স্পোর্ট ইয়ার্ড—প্রতি খাতেই ক্যাস্ট্রল পণ্য দেয়ার বিষয়ে আমরা বিশ্বস্ত।”
বাংলাদেশে লুব্রিক্যান্টের চাহিদা ও বাজারের অবস্থা
বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২০% বেড়েছে। রাস্তাঘাট উন্নয়ন, শিল্প-কারখানা রপ্তানি বাড়ানো, নতুন পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণ—এসব কারণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লুব্রিক্যান্ট ও অটোমোবাইল অয়েল চাহিদাও সামান্য বৃদ্ধিপথে আছে।
- অটোমোটিভ সেক্টর: মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান থেকে শুরু করে হাইওয়ে বাস—সব জায়গায় প্রয়োজন ভাল গুণের মটর অয়েল।
- ইন্ডাস্ট্রি ও ফ্যাক্টরি: কম্প্রেসর গ্রিড, গিয়ারবক্স, হাইড্রলিক সিস্টেমসহ যন্ত্রপাতি দীর্ঘমেয়াদি সেবা নিশ্চিত করতে সঠিক গ্রেডের গ্রিস ও গিয়ার অয়েলের উপর নির্ভর করে।
- মেরিন ও এগ্রিকালচার: নদীপথে মালবাহী নৌকা, ট্র্যাক্টর, রাইস মিল—সবখাতেই লুব্রিক্যান্টের চাহিদা সমান।
সরকারি এক পোর্টাল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ লুব্রিক্যান্ট মার্কেট বর্তমানে বছরে প্রায় ৫০,০০০ মেট্রিক টন পণ্য প্রক্রিয়াজাত হয়, যার গড়ে মূল্য প্রায় ২৫০–৩০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর কমপক্ষে ৫–৭% হারে চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা প্রকাশিত হচ্ছে।
রক এনার্জির পরিকল্পনা ও কার্যক্রম
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রক এনার্জি–ক্যাস্ট্রল সহযোগিতা নিম্নলিখিত খাতে বিশেষভাবে কাজ করবে:
- খুচরা আফটারমার্কেট বিস্তার:
- সারাদেশে ক্যাস্ট্রল ব্র্যান্ডেড ওয়ার্কশপ স্থাপন
- কনজিউমার রিটেইল আউটলেটের মাধ্যমে প্রোডাক্ট ডিসপ্লে
- কর্পোরেট ক্লায়েন্ট সেবা:
- শিল্প-কারখানা, পাওয়ার জেনারেশন ইউনিট, নির্মাণখাতের বড় অংশীদারদের সরাসরি সাপ্লাই
- রক্ষণাবেক্ষণ ও টেকনিক্যাল সাপোর্টের ট্রেনিং সেশন
- ডিজিটাল অর্ডারিং প্ল্যাটফর্ম:
- মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে অন-ডিমান্ড ডেলিভারি
- ক্লাউড-বেস সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
- টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও ওয়ার্কশপ:
- ইঞ্জিনিয়ার ও মেকানিকদের জন্য মাসিক সেমিনার
- কিভাবে সঠিক গ্রেড বাছাই করবেন, ড্রেনিশিডিউল ঠিক রাখবেন—এসব নিয়ে ওয়ার্কশপ
টেকসই ও সবুজ প্রযুক্তিতে ফোকাস
ক্যাস্ট্রল ইতোমধ্যেই বিশ্বের ইকো-ফ্রেন্ডলি গ্রেড উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।
- সিন্থেটিক অয়েল: কম ট্র্যাকশন ও কম কার্বন নিঃসরণ
- বায়ো-গ্রেডেবেল গ্রিস: মৎস্য চাষ, কৃষি যন্ত্রে পরিবেশ-সুরক্ষা
- রিসাইক্লেবল প্যাকেজিং: ১০০% পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক
রক এনার্জি MD তানজিমের কথায়,
“পরিবেশে কম প্রভাব ফেলে দীর্ঘমেয়াদে খরচ সাশ্রয় করতে সিন্থেটিক ও হাইব্রিড গ্রেডগুলো আমাদের পরবর্তী ইনভেস্টমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু। আমরা ক্যাস্ট্রলের সাসটেইনেবল পোর্টফোলিও বাংলাদেশে চালু করব।”
গ্রাহক-পর্যালোচনা ও প্রত্যাশা
স্থানীয় গাড়ি সার্ভিস মালিকরা আগ্রহের সঙ্গে এই সংবাদ গ্রহণ করেছেন। ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ছোটিয়া মোটরস মালিক মো. ছমিম বলেন,
“ক্যাস্ট্রল মানের তেল দামে একটু উঁচু, তবে ইঞ্জিন সুরক্ষা বেশি। এখন রক এনার্জির দ্রুত ডেলিভারি থাকলে আমাদের ইমিডিয়েট স্টক ম্যানেজমেন্ট সহজ হবে। গ্রাহকরাও খুশি।”
চট্টগ্রামের ব্রাদার্স রাইসভিল ফ্যাক্টরির প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন,
“ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড গিয়ার অয়েলে ক্যাস্ট্রলগুলোর ইকোনমি ভালো—ইঞ্জিনগত দিক থেকে দামে তো কিছুটা বেশি, তবুও টোটাল কস্ট অফ ওনারশিপ কম যায়।”
ভবিষ্যতের অগ্রাধিকার
এই অংশীদারিত্ব কালেক্টিভ টেকসই গ্রোথ এবং নলেজ ট্রান্সফার নিশ্চিত করতে পারে:
- নতুন পণ্য লঞ্চ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানো
- রিসার্চ সাপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বাড়ানো
- কমিউনিটি এডুকেশন: কনজিউমারদের পণ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাম্পেইন
রক এনার্জি এখন থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি ডিস্ট্রিক্ট সদর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এবং অটো সার্ভিস সেন্টারে ক্যাস্ট্রলের সেবা ছড়িয়ে দিতে পারে—যা দেশের অটোমোটিভ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কার্যক্রমকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
রক এনার্জি–ক্যাস্ট্রল অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের লুব্রিক্যান্ট শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। খুচরো থেকে কর্পোরেট, ডিজিটাল থেকে টেকনিক্যাল—সব ফ্রন্টে তারা গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা নিশ্চিত করবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং সার্বক্ষণিক প্রোডাক্ট সাপোর্ট দেশজুড়ে ইঞ্জিনের আয়ু বাড়াতে সহায়ক হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।