ইউএস-বাংলার ঢাকা-রিয়াদ ফ্লাইট চালু

বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিমান যোগাযোগ আরও সুসংহত করতে চালু করেছে নতুন একটি সরাসরি ফ্লাইট রুট—ঢাকা থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ পর্যন্ত। সোমবার (২১ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো এই নতুন আন্তর্জাতিক রুট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ইউএস-বাংলার প্রথম ফ্লাইটটি ৪২৩ জন যাত্রী নিয়ে রিয়াদের উদ্দেশে যাত্রা করে। এই ফ্লাইটটি ইউএস-বাংলার ১৪তম আন্তর্জাতিক গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী ফ্লাইট ও সময়সূচি
সংস্থাটির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে পাঁচদিন এই রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হবে। অত্যাধুনিক ৪৩৬ আসনের এয়ারবাস দিয়ে পরিচালিত হবে ফ্লাইটগুলো। ঢাকা থেকে রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ এবং শুক্রবার ফ্লাইট ছাড়বে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে, যা রিয়াদে পৌঁছাবে স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে।
রিয়াদ থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রত্যাবর্তী ফ্লাইট ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে এবং ঢাকায় অবতরণ করবে ভোর ৪টায়। নির্ধারিত সময়সূচি এবং সরাসরি রুটের ফলে যাত্রীরা এখন তুলনামূলকভাবে কম সময়ে, কম ভোগান্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই শহরে পৌঁছাতে পারবেন।
প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক যোগাযোগ
সৌদি আরব, বিশেষ করে রিয়াদে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য এই নতুন রুটটি বিশেষ সুবিধা নিয়ে আসবে। প্রতিবছর লাখ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যান এবং এদের একটি বড় অংশের গন্তব্য রিয়াদ। এতদিন পর্যন্ত তাদেরকে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের মাধ্যমে ট্রানজিট নিয়ে রিয়াদে পৌঁছাতে হতো, যা সময় ও ব্যয়বহুল ছিল।
এই রুট চালুর ফলে তাদের যাত্রা যেমন সরল ও সরাসরি হবে, তেমনি সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইউএস-বাংলা এই চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়েই এই রুটের পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে।
ইউএস-বাংলার সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক রুটে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। বর্তমানে সংস্থাটির আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে: কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, দোহা, মাসকাট, শারজাহ, দুবাই, গুয়াংজু, কলকাতা, চেন্নাই, মালে ও ব্যাংকক। নতুন সংযুক্ত হওয়া রিয়াদসহ এই সংখ্যা এখন ১৪।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা আরও আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে। লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক, পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিমান পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় রুটেই উন্নয়ন
ইউএস-বাংলা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক নয়, দেশের অভ্যন্তরেও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। অভ্যন্তরীণ এই নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীদের সংযোগ সুবিধা প্রদান করে, যা পুরো ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।
নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবায় অগ্রাধিকার
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রীসেবা, নিরাপত্তা এবং সময়নিষ্ঠতায় বিশেষ মনোযোগ দিয়ে থাকে। তারা নিয়মিতভাবে তাদের বিমানবহর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে এবং প্রতিটি ফ্লাইটে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত ক্রু নিয়োগ করে যাত্রীদের আরামদায়ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার জন্য।
নতুন রিয়াদ রুটেও থাকবে উন্নতমানের সেবার নিশ্চয়তা। যাত্রীরা পাবেন উন্নত ইন-ফ্লাইট খাবার, বিনোদন এবং কাস্টমার কেয়ার সেবা।
অর্থনীতি ও বৈদেশিক রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব
বাংলাদেশের বৈদেশিক আয় বা রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ আসে সৌদি আরব থেকে। এই সরাসরি রুট চালু হলে প্রবাসীদের যাত্রা সহজ হবে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমবাজারের সম্প্রসারণেও এটি সহায়ক হবে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলছে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে।
উপসংহার
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ঢাকা-রিয়াদ সরাসরি ফ্লাইট চালু নিঃসন্দেহে একটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এটি শুধুমাত্র একটি নতুন রুট চালু নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন ব্যবস্থার অগ্রগতির একটি বড় ধাপ। বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য এটি একটি নতুন আশার আলো, যা ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।