বানিজ্য

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে বিপাকে পচনশীল পণ্য রপ্তানি, বাড়ছে কার্গো সংকট

ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি গুরুতর শঙ্কায় পড়েছে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানি খাত। যেহেতু তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য এখন অধিক হারে বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই কার্গো বিমানে চাপ বাড়ায় ফল, সবজি ও অন্যান্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাযুক্ত পণ্যের জন্য জায়গা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ছে

কার্গো সংকটে দিশেহারা কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে এখনো নিজস্ব কোনো সরকারি কার্গো বিমান না থাকায়, রপ্তানির জন্য যাত্রীবাহী বিমানের অবশিষ্ট কার্গো হোল্ডের ওপরই নির্ভর করতে হয়। তবে সেখানে লাগেজ অগ্রাধিকার পায় এবং তারপর যে সামান্য জায়গা থাকে, তা খুবই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পচনশীল পণ্যের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা মানেই রপ্তানিযোগ্য পণ্যের গুণগত মান হ্রাস ও আর্থিক ক্ষতি।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,

“আমরা এমনিতেই যাত্রীবাহী বিমানের ফাঁকা জায়গায় পণ্য পাঠাই, যেখানে নিয়মিতভাবে স্থান পাওয়া যায় না। এখন যদি তৈরি পোশাকের মতো পণ্য যুক্ত হয়, তাহলে আমরা আরও অবহেলিত হব।”

তিনি আরো বলেন,

“পচনশীল পণ্য সময়মতো না পাঠাতে পারলে তা নষ্ট হয়ে যায়। রপ্তানিকারকদের খরচও বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিজস্ব কার্গো ফ্লাইট চেয়ে আসছি, এখন সেটা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।”

পোশাক রপ্তানিতে ভারত হয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই

ভারতের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালু থাকাকালে, প্রতি মাসে প্রায় ২,৫০০ টন তৈরি পোশাক কলকাতা হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। এখন সেই পরিমাণ পোশাক সরাসরি ঢাকার বিমানবন্দর থেকেই পাঠাতে হবে। এতে কার্গো ফ্লাইট এবং যাত্রীবাহী বিমানের হোল্ডে চাপে পড়বে অন্য রপ্তানি খাতগুলো, বিশেষ করে পচনশীল পণ্য খাত।

কাস্টমস ও বিজিএমইএ সূত্র জানায়, গত ১৫ মাসে ৩৫ হাজার টন পোশাক ভারত হয়ে রপ্তানি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৬২ মিলিয়ন ডলার বা ৫,৬০০ কোটি টাকা। এসব পণ্য বিশ্বের ৩৬টি দেশে গেছে, যার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন প্রভৃতি।

মৌসুমী রপ্তানিতে ভয়াবহ প্রভাব

বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে ২,৫০০ টন সবজি ও অন্যান্য পচনশীল পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু আম-কাঁঠালের মৌসুমে এই পরিমাণ বেড়ে প্রতি সপ্তাহে ১,০০০-১,৫০০ টন পর্যন্ত হয়, অর্থাৎ মাসে প্রায় ৬,০০০ টন রপ্তানি হয়। এই সময়টাতে কার্গো হোল্ডে জায়গার সংকট হলে, দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষিভিত্তিক রপ্তানি খাত চরম বিপর্যয়ে পড়বে।

কৃষিপণ্য রপ্তানি টিকিয়ে রাখতে ‘কার্গো ফ্লাইট’ সময়ের দাবি

বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকেরা মনে করছেন, কৃষিপণ্য রপ্তানিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে নিজস্ব কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ শুধু ভারত হয়ে রপ্তানি বন্ধ হওয়াই নয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পচনশীল পণ্যের বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে কার্যকর পরিবহন নেটওয়ার্ক অপরিহার্য।

কার্গো হ্যান্ডলিং-এর ঘাটতি এবং বিমানের অগ্রাধিকার নীতিমালার অভাবের কারণে কৃষিপণ্যের মতো সংবেদনশীল পণ্য রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় সময়সীমার মধ্যে বিদেশে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে

রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত জরুরি

বাংলাদেশের রপ্তানি কাঠামোতে পচনশীল কৃষিপণ্য এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিকাঠামোতে তৈরি পোশাকের বিমান নির্ভরতা বাড়ার ফলে এ খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, যা দ্রুত সমাধান না করলে দেশের মোট রপ্তানি আয় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের টিকে থাকা ঝুঁকিতে পড়বে।

এখন সময় এসেছে নিজস্ব কার্গো ফ্লাইট চালু করা, রপ্তানিকৃত পণ্য পরিবহনের জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি করা এবং বিমানবন্দরে কৃষিপণ্য হ্যান্ডলিং-এ প্রণোদনা নিশ্চিত করা। তা না হলে বাংলাদেশের পচনশীল কৃষিপণ্য ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারাতে শুরু করবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button