বানিজ্য

ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ২ কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। ভারতের বিখ্যাত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২৪ দশমিক ৭৭ মার্কিন ডলার।

চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন

আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

খাদ্য মজুত ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকার ধারাবাহিকভাবে চাল আমদানি করছে। গত কয়েক মাস ধরে নন-বাসমতী সেদ্ধ চালের আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ধাপে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চাল আমদানির ধারাবাহিকতা

এর আগে, ১৪ মার্চ ভারতের এস পাত্তাভী অ্যাগ্রো ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকেও ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছিল ক্রয় কমিটি। তখন প্রতি টন চালের দাম নির্ধারিত হয়েছিল ৪২৯ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলার। সেই তুলনায় এবারের চালের দাম কিছুটা কম পড়েছে।

এক মাসের একটু বেশি আগে, ২০ ফেব্রুয়ারি, একই ধরনের চাল আমদানির জন্য প্রতি টন ৪৩৪ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে চালের আমদানি মূল্য সামান্য কমেছে।

বাজার পরিস্থিতি ও চালের মূল্য ওঠানামা

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে চাল আমদানি করে থাকে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির পরিকল্পনা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামের ওঠানামার কারণে প্রতি চালানেই কিছুটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছর ভারতের চালের রপ্তানিমূল্য তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছে। তবে সাম্প্রতিক কালে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় চালের দাম অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

দেশের খাদ্য মজুত পরিস্থিতি

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। তবে বর্ষাকাল এবং বন্যার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে খাদ্য মজুত আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয়। এছাড়া, ন্যায্যমূল্যে চাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি অব্যাহত থাকবে।’

খাদ্য নিরাপত্তা ও সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নীতির অংশ হিসেবে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার আমদানি নীতিতে পরিবর্তন আনছে। প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে বাজারে চালের ঘাটতি না হয় এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। বাংলাদেশ যদি বিকল্প সরবরাহ উৎস তৈরি করতে পারে, তাহলে আমদানির ক্ষেত্রে আরও প্রতিযোগিতা তৈরি হবে, যা চালের দামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া

চাল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।’

অপরদিকে, ভোক্তাদের একাংশ মনে করেন, চাল আমদানির ফলে বাজারে স্বস্তি এলেও দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করাও জরুরি।

উপসংহার

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ধারাবাহিকভাবে চাল আমদানি করছে। সম্প্রতি চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা কমলেও ভবিষ্যতে তা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সরকার চালের মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি, স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button