ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণ অভ্যুত্থানের পর এই প্রথমবারের মতো ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে।
সাদিক কায়েমের মন্তব্য
ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেছেন, “এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক ও সুন্দর রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সকাল থেকে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। সবকিছু স্বাভাবিক ও সুন্দর। শেষ পর্যন্ত যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তবে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। শিক্ষার্থীরাও উৎসাহ নিয়ে ভোট দিচ্ছেন। এ ধারা বজায় থাকলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ ফলাফল আসবে।”
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ডাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট চলছে। বিকেল ৪টার মধ্যে কেন্দ্রে লাইনে থাকা শিক্ষার্থীরাও ভোট দিতে পারবেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের মোট ৪১ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। ভোট দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা ১০ মিনিট করে সময় পাবেন।
নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি পয়েন্ট চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এই অবস্থা টানা ৩৪ ঘণ্টা চলবে, যা আগামী বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভোটের পরিবেশ
ভোটাররা বলছেন, সব প্রতিশ্রুতি হয়তো পূরণ করতে পারবেন না প্রার্থীরা। কিন্তু প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হলে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগবে। গতকাল সোমবার নির্বাচনের আগের দিন ৭ জন প্রার্থী ও ২৩ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেলেও প্রার্থীরা দীর্ঘদিনের প্রচার চালানোর ফলে কিছুটা ক্লান্ত ও নির্বাচনী ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো ও নির্বাচন সামনে রেখে কোনো ধরনের শঙ্কা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। সোমবার বিকেলে ডাকসু নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ডাকসু নির্বাচন হবে একটি মডেল নির্বাচন। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করতে পারে, এমন দৃষ্টান্ত ঢাবি শিক্ষার্থীরা তৈরি করবে।” তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। কোনো ধরনের শঙ্কার জায়গা আমরা দেখছি না।”
নারী ভোটারদের উপস্থিতি
ডাকসু নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি নজরকাড়া। বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন। এটি ছাত্ররাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা
এবারের নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী, আপ বাংলাদেশ এবং ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তাদের প্যানেল ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এমন এক সময়ে এই নির্বাচন হচ্ছে, যখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য নেই; ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনের দাপটও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই নজিরবিহীন।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
ভোটারদের একজন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী ইফরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, “ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে যে আমেজ তৈরি হয়েছে, তা প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে অব্যাহত থাকবে এই আশা রাখি।” আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রার্থীদের কাছে তাঁর মূল প্রত্যাশা থাকবে নিয়মিত যেন ডাকসু নির্বাচনটি হয়।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নির্বাচন শেষ হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের ইশতেহার অনুযায়ী কাজ শুরু করবেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। এছাড়া, ছাত্ররাজনীতির উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। সাদিক কায়েমের মতো প্রার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব দিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
MAH – 12713, Signalbd.com



