বানিজ্য

ঈদে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকবে বেনাপোল স্থলবন্দর

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ৯ দিন বন্ধ থাকবে বেনাপোল স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম। ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থলবন্দর ও কাস্টমস অফিস বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে যথারীতি বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

সীমিত পরিসরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মুকিতুল ইসলাম এক পত্রে জানান, ঈদের ছুটিতে সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, এই নির্দেশনা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে কার্যকর হলেও বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থলবন্দরে তা বাস্তবায়িত হয় না। কারণ, বন্দর ব্যবহারকারীরা সবাই ছুটিতে চলে যাওয়ায় কার্যক্রম স্থগিত থাকে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে এই বন্দর দিয়ে। মাত্র সাত দিনের এলসির (লেটার অব ক্রেডিট) মাধ্যমে সহজেই পণ্য আমদানি করা যায়।

কলকাতা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার হওয়ায় এটি আমদানিকারকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সাধারণত, আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে বেনাপোল চেকপোস্টে পৌঁছানো যায়। ফলে, ব্যবসায়ীরা অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেনাপোল বন্দরকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তবে, টানা ৯ দিনের ছুটি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দীর্ঘ ছুটির কারণে সম্ভাব্য সমস্যা

বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই দীর্ঘ ছুটির কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরে পণ্যজটের সমস্যা লেগেই আছে, যা এই ছুটির ফলে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে, যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য বেনাপোল বন্দর নির্ভরশীল, তাদের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শামসুর রহমান বলেন, “আগামী ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবেন। ফলে, তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ থাকবে। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।”

সীমান্তে ট্রাকজটের আশঙ্কা

বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে ইতিমধ্যেই ট্রাকজটের সমস্যা রয়েছে। দীর্ঘ ছুটির ফলে দুই দেশের সীমান্তে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্দরের সীমিত স্থানের কারণে ইতোমধ্যে কয়েকশ পণ্য বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এই ছুটির ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) শামীম হোসেন বলেন, “২৭ মার্চ বিকেল থেকে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে, বন্দরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল দেবে। পাশাপাশি, বেনাপোল পোর্ট থানা কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করা হয়েছে।”

পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম আহম্মেদ জানান, “ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাসপোর্টযাত্রীদের চাপ কিছুটা কম থাকতে পারে।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া বলেন, “ঈদের ছুটির মধ্যে বন্দর এলাকায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও টহল দেবে।”

ব্যবসায়ীদের দাবি ও সুপারিশ

ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনাপোল বন্দরে যাতে অন্তত সীমিত পরিসরে পণ্য খালাসের কার্যক্রম চালু রাখা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। বিশেষ করে, শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যাতে আটকে না থাকে, সে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বেনাপোলের এক আমদানিকারক বলেন, “প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে একই সমস্যা হয়। লম্বা ছুটির ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সরকার যদি অন্তত সীমিত পরিসরে বন্দর ও কাস্টমস চালু রাখার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমদানি-রপ্তানির ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।”

উপসংহার

টানা ৯ দিনের ছুটি বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে, যা শিল্প উৎপাদন এবং বাণিজ্যে সাময়িক স্থবিরতা আনতে পারে। তবে, এই ছুটির মধ্যে যাতে কোনো নিরাপত্তা সমস্যা দেখা না দেয়, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের দীর্ঘ ছুটির ফলে যাতে বাণিজ্য ব্যাহত না হয়, সে জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button