বানিজ্য

BCCCI এর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নারগিস মুরশিদা

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোছা. নারগিস মুরশিদা। আজ রোববার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

প্রশাসক নিয়োগের পটভূমি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশের মাধ্যমে বিসিসিসিআইয়ের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করা হয়। বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১৩ মার্চ মোছা. নারগিস মুরশিদাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে কার্যকরভাবে সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। সংগঠনের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় কার্যকরী ভূমিকা পালন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায়, বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২–এর ১৭(১) ধারা অনুযায়ী ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

প্রশাসকের দায়িত্ব ও পরিকল্পনা

প্রশাসক হিসেবে মোছা. নারগিস মুরশিদার প্রধান দায়িত্ব হবে বিসিসিসিআইয়ের সার্বিক প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। তিনি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরও বলা হয়, প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন প্রশাসক।

বাণিজ্য সংগঠনের সাম্প্রতিক অস্থিরতা

বিগত কয়েক মাস ধরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের কার্যকরী কমিটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনের একটি পক্ষ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেছে।

বিসিসিসিআইয়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সংগঠনের সদস্যদের একাংশ অভিযোগ করেছে যে, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হয়নি। এর ফলে সংগঠনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গত কয়েক বছরে তারা ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নানা নীতিগত সংস্কার এনেছে।

বিসিসিসিআইয়ের প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হলো সংগঠনটিকে সুসংগঠিত করা, সদস্যদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং একটি কার্যকর পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা।

নারগিস মুরশিদার অভিজ্ঞতা

মোছা. নারগিস মুরশিদা একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তিনি ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নারগিস মুরশিদা জানিয়েছেন, তিনি বিসিসিসিআইকে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন। তিনি বলেন, “আমি সংগঠনের সকল সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। আমার লক্ষ্য হবে ১২০ দিনের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।”

সংগঠনের সদস্যরা প্রশাসকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, তার নেতৃত্বে বিসিসিসিআই আগের চেয়ে শক্তিশালী ও সংগঠিত হয়ে উঠবে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

বিসিসিসিআইয়ের প্রশাসক নিয়োগের খবরে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু সদস্য মনে করছেন, প্রশাসক নিয়োগের ফলে সংগঠনের সুশৃঙ্খল পরিচালনা নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে, কিছু সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যবসায়িক সংগঠনের স্বায়ত্তশাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রশাসক হিসেবে মোছা. নারগিস মুরশিদার দায়িত্ব গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তার নেতৃত্বে সংগঠনটি নতুনভাবে সুসংগঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১২০ দিনের মধ্যে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন করে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচিত করাই হবে তার প্রধান লক্ষ্য।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button