বানিজ্য

আদানির দাবি করা অঙ্কের চেয়ে ১৪১ মিলিয়ন ডলার কম বকেয়া রয়েছে, বলছে পিডিবি

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার দাবির বিরোধিতা করেছে। পিডিবি জানিয়েছে, আদানির কয়লা মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতির কারণে ১৪১ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত চার্জ করা হয়েছে। আদানি দাবি করেছে, পিডিবির কাছে তাদের ৭৭১ মিলিয়ন ডলার পাওনা আছে, কিন্তু পিডিবির হিসাব অনুযায়ী প্রকৃত পাওনা প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন ডলার।

পিডিবির বক্তব্য

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, “আমরা আদানির মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতির সঙ্গে একমত নই। আমরা যা ন্যায্য মনে করি, সেই অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করছি।” পিডিবি জানুয়ারিতে আদানিকে দুবার চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত চার্জের ব্যাখ্যা চেয়েছে এবং বিলম্বে পরিশোধের ফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ক্রমবর্ধমান বকেয়া ও অর্থ পরিশোধের সমস্যা

ডলার সংকটের কারণে ২০২৪ সালের অক্টোবরে আদানির বকেয়া পাওনা ৮৪০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। একপর্যায়ে, আদানি ৭ নভেম্বরের মধ্যে পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। গত অক্টোবরে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়, যার মধ্যে ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতের।

গত ছয় মাসে পিডিবি আদানিকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে এবং বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মূল বিতর্ক

পিডিবি দাবি করেছে, আদানি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত নিয়ম মেনে কয়লার দাম নির্ধারণ করছে না। চুক্তিতে বলা হয়েছে, কয়লার মূল্য নির্ধারণে দুটি সূচক—অস্ট্রেলিয়ান নিউক্যাসল এবং ইন্দোনেশিয়ান কয়লা সূচক (আইসিআই) ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আদানি আইসিআই১-এর পরিবর্তে অতিরিক্ত দুইটি সূচক (আইসিআই২ ও আইসিআই৩) ব্যবহার করছে, যা ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরেকটি বিতর্কের বিষয় হলো কয়লার দামে ছাড়। ২০২৩ সালে আদানি এই ছাড় প্রযোজ্য করলেও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা বন্ধ করে দেয়। আদানির এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের পাওনা পরিশোধের পরিবর্তে পিডিবি ছাড় দাবি করছে। প্রথমে তারা বকেয়া পরিশোধ করুক, তারপর আমরা ছাড় নিয়ে আলোচনা করতে পারি।”

সমাধানের পথ

পিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ঈদ-উল-ফিতরের পর আদানির সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে আদানিকে কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে দুটি চিঠি পাঠিয়েছি, তবে তাদের প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক নয়।”

একটি সরকারি পর্যালোচনা কমিটি বলছে, আদানির মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি বিদ্যুতের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া, আদানি প্রতি মাসে বিলম্বে পরিশোধের জন্য ২ শতাংশ ফি নির্ধারণ করেছে, যা বার্ষিক গড় ২৭ শতাংশে পৌঁছায়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে হওয়া চুক্তির আওতায় আদানি ইতোমধ্যে পিডিবির কাছ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিলম্ব ফি আদায় করেছে।

বিদ্যুৎ খরচ কমানোর চেষ্টা

১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী দামে পেতে পিডিবিকে আদানির সঙ্গে কয়লার মূল্য কমানোর বিষয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে সরকারি পর্যালোচনা কমিটি। ২০২৩ সালে আদানি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছিল যে, তাদের বিদ্যুতের দাম অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় কম হবে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ ছিল ১১.৮৩ টাকা, যেখানে আদানি বিদ্যুতের মূল্য ছিল ১৪.৮৭ টাকা।

আদানি এবং পিডিবির মধ্যে চলমান এই বিতর্ক বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা এবং কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি, যাতে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং খরচের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button