মার্চে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে রেমিট্যান্স

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর! মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যে হারে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে করে মার্চে রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড গড়তে চলেছে বাংলাদেশ।
ঈদের আগে রেমিট্যান্সে নতুন উল্লম্ফন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যানুসারে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা ব্যাপক হারে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনেক বেশি। ২০২৪ সালের মার্চের প্রথম ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ডলার, যা এই বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৯৯ কোটি ডলার।
অর্থবছরের পরিসংখ্যান
ইতোমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্সের প্রবাহ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫ কোটি ডলার। তুলনামূলকভাবে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল এক হাজার ৬৩৪ কোটি ডলার। ফলে, বর্তমান অর্থবছরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
শেষ চার দিনের রেমিট্যান্স প্রবাহ
এর আগে মার্চের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ১৬৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ফলে, গত চার দিনে অতিরিক্ত ৫৯ কোটি ডলার এসেছে। শুধু ১৯ মার্চেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের সম্ভাব্য মাইলফলক
যদি রেমিট্যান্স প্রবাহ একই হারে চলতে থাকে, তবে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্স ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এটি হবে বাংলাদেশের জন্য রেমিট্যান্স অর্জনের এক নতুন মাইলফলক।
পূর্ববর্তী রেকর্ড ও বর্তমান পরিস্থিতি
দেশে মাসিক হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, যা ছিল ২৬৪ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। তবে চলতি মার্চ মাসে সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
- আসন্ন ঈদের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন।
- ডলারের বিনিময় হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
- ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের স্বচ্ছতা ও সরকারি প্রণোদনা নীতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই ধারা বজায় থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হবে।
উপসংহার
রেমিট্যান্স প্রবাহের এই নতুন রেকর্ড দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী কয়েকদিনের রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে, মার্চ মাসে বাংলাদেশ সত্যিই রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ড গড়তে পারবে কি না।