বানিজ্য

মধ্যপ্রাচ্য ও আজারবাইজানে ৮টি হালাল প্রসাধনী রপ্তানি করবে রিমার্ক-হারল্যান

মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানে হালাল কসমেটিকস বা প্রসাধনী রপ্তানি করতে চলেছে বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যান। বর্তমানে এসব বাজারে প্রসাধনপণ্য বিক্রিতে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা ধরতে চায় এই কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে লিলি ও অলিন ব্র্যান্ডের আটটি হালাল পণ্য রপ্তানি করা হবে, তবে ভবিষ্যতে শতাধিক হালাল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

হালাল পণ্য রপ্তানির নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের রপ্তানির ইতিহাসে হালাল প্রসাধনীর জায়গা এখনো একেবারে নতুন হলেও বিশ্বব্যাপী এই পণ্যের বাজার দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ মুসলিম অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলে হালাল পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদিত এসব হালাল প্রসাধনী বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে।

রিমার্ক-হারল্যানের পরিচালক ও সুপরিচিত চিত্রনায়ক শাকিব খান গত রোববার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই রপ্তানির পরিকল্পনার কথা জানান। উক্ত অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) কাছ থেকে রিমার্কের হালাল পণ্যের সনদ পাওয়ার উপলক্ষে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের জনপ্রিয় খেলোয়াড় তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান ও তানজিদ হাসান তামিম। এছাড়া রিমার্ক-হারল্যানের নির্বাহী পরিচালক ও চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন।

রিমার্ক-হারল্যানের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

রিমার্ক-হারল্যানের এই নতুন উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের হালাল প্রসাধনী পণ্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। রিমার্ক-হারল্যানের নির্বাহী পরিচালক বলেন, “আমরা কেবল রপ্তানির জন্যই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে চাই। আমাদের হালাল কসমেটিকসগুলো গুণগত মান ও সাশ্রয়ী মূল্যের সমন্বয়ে তৈরি, যা আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।”

প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পর্যায়ে আটটি হালাল পণ্য রপ্তানি করলেও ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। আগামী বছরগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে হালাল প্রসাধনীর পরিসর আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ

আগামী এপ্রিলে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিজেদের উৎপাদিত স্কিন কেয়ার ও কসমেটিকস পণ্য নিয়ে অংশ নেবে রিমার্ক-হারল্যান। এই মেলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ বাজারে প্রতিষ্ঠানটির প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী হালাল কসমেটিকসের বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৩ সালে এই খাতের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করছে।

হালাল প্রসাধনী কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটির বেশি, যা সামগ্রিক ভোক্তা বাজারের একটি বিশাল অংশ। হালাল প্রসাধনী মূলত এমন পণ্য যা কোনো হারাম উপাদান বা প্রাণীজ উৎস থেকে তৈরি নয় এবং ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়। হালাল প্রসাধনীর ক্ষেত্রে অ্যালকোহলমুক্ত ও প্রাণীজ উপাদানবিহীন কসমেটিকস অত্যন্ত জনপ্রিয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হালাল প্রসাধনীর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মুসলিম জনসংখ্যা এসব পণ্যের অন্যতম প্রধান গ্রাহক। এ কারণে বাংলাদেশের রিমার্ক-হারল্যানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজার ধরতে চায়।

বাংলাদেশের প্রসাধনী রপ্তানির সম্ভাবনা

বাংলাদেশে প্রসাধনী শিল্পের বিকাশ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের প্রসাধনী ব্র্যান্ডগুলোর অবস্থান ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রসাধনী ও ব্যক্তিগত যত্নের পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়। তবে হালাল কসমেটিকসের ক্ষেত্রে এখনো দেশটির অংশগ্রহণ সীমিত।

রিমার্ক-হারল্যানের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ এই খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। হালাল কসমেটিকস রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং বিশ্বব্যাপী ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

উপসংহার

রিমার্ক-হারল্যানের এই উদ্যোগ বাংলাদেশে হালাল প্রসাধনী শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করবে। গুণগত মান বজায় রেখে এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রয়োজন অনুসারে হালাল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

বিশ্বজুড়ে হালাল প্রসাধনীর চাহিদা বাড়ছে, আর সেই বাজারের অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। রিমার্ক-হারল্যানের এই উদ্যোগ দেশের কসমেটিকস শিল্পকে বৈশ্বিক পর্যায়ে এগিয়ে নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে বিবেচিত হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button