ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বিপর্যয়: ৯০ কর্মকর্তার কাঁধে লাখ লাখ অভিযোগ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বর্তমানে এক গুরুতর কর্মী সংকটের মুখোমুখি। এই সংস্থার কাছে লাখ লাখ অভিযোগ জমা পড়লেও, সেগুলো দেখভালের জন্য রয়েছে মাত্র ৯০ জন কর্মকর্তা। অভিযোগ শাখার উপ-পরিচালক মাসুম আরেফিন জানান, “অবশ্যই আমাদের কর্মীর অভাব রয়েছে। ঢাকায় মহাপরিচালক ছাড়া কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। আজ তাদের মধ্যে ১৩ জন মাঠে রয়েছেন এবং আমি এখানে একাই শুনানি পরিচালনা করছি।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গুরুত্ব
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ক্রমেই জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, কর্মী সংকটের কারণে তাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদ নুরুদ্দিন একটি নামকরা কোম্পানি থেকে নতুন রেফ্রিজারেটর কিনে খুব আনন্দিত ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তিনি সমস্যার সম্মুখীন হন। রেফ্রিজারেটরের বাম দিকের দরজার হাতলের চারপাশে পানির বাষ্প জমতে শুরু করে। তিনি কোম্পানির কাছে অভিযোগ জানান, কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
অবশেষে, তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ জমা দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোম্পানির প্রতিনিধি প্রথমে আসেননি, তবে পরে এসে ১৫ দিনের মধ্যে রেফ্রিজারেটর পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি রেফ্রিজারেটর বদলে দিতে ব্যর্থ হলে নুরুদ্দিন আবারও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযোগের সমাধানে কাজ করছেন। নুরুদ্দিনের অভিযোগের পর, অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা কোম্পানিকে সতর্ক করেন। এর পরেই কোম্পানি নুরুদ্দিনকে নতুন রেফ্রিজারেটর দেয়। নুরুদ্দিন বলেন, “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আমি সত্যিই খুশি।”
তবে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাজের চাপ অত্যধিক। মাসুম আরেফিন বলেন, “১৮ কোটি মানুষের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ৯০ জন অফিসার।”
কর্মী সংকটের প্রভাব
রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য পণ্যের দাম বাড়ায়, যার ফলে ভোক্তারা অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন। এই পরিস্থিতিতে মাঠ পরিদর্শনে কর্মকর্তাদের দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। অফিসে এসে দেখা যায়, অভিযোগ নিচ্ছেন মাত্র দুইজন কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে একজন অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছেন।
অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, “কাজের চাপ অত্যধিক। ভোক্তা অধিকার ৩০০ কর্মকর্তার জন্য অনুরোধ করলেও, দেওয়া হয়েছে মাত্র ১২ জনকে।”
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, “কিছু কর্মী অন্যত্র চলে যাওয়ায় কর্মকর্তার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।” তবে তিনি জানান, “আমরা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি এবং আমি বিশ্বাস করি আমাদের যে জনবল আছে তা যথেষ্ট।”
অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুলতানা বলেন, “অবশ্যই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। যদি ৫০০টি অভিযোগ আসে, তবে আমাকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৩০০টি মামলা সামলাতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “একটি অভিযোগ সমাধান করা এক দিনের কাজ নয়। জটিল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তিন দিন পর্যন্ত শুনানি হতে পারে।”