ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় ৯ শতাংশ দাবি রিহ্যাবের

বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে পুরোনো ফ্ল্যাট বেচাকেনার জন্য সেকেন্ডারি মার্কেট গড়ে তুলতে পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ৪ শতাংশ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব দাবি উপস্থাপন করেন রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
বর্তমান নিবন্ধন ব্যয়
বর্তমানে ফ্ল্যাটের আকারভেদে নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ হয়ে থাকে। এর মধ্যে গেইন ট্যাক্স ৮ শতাংশ, স্ট্যাম্প শুল্ক ১.৫ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ফি ৩ শতাংশ এবং ১,৬০০ বর্গফুট পর্যন্ত ভ্যাট ২ শতাংশ ও ১,৬০০ বর্গফুটের বেশি ফ্ল্যাটের জন্য ভ্যাট ৪.৫ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে।
রিহ্যাবের প্রস্তাব
রিহ্যাব নেতারা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে ৯ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী:
- গেইন ট্যাক্স: ৪ শতাংশ
- স্ট্যাম্প শুল্ক: ১ শতাংশ
- নিবন্ধন ফি: ১ শতাংশ
- স্থানীয় সরকার ফি: ১ শতাংশ
- সব ধরনের ফ্ল্যাটে ভ্যাট: ২ শতাংশ
এছাড়া, পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় সাড়ে ৪ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে রিহ্যাব। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, নিবন্ধন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি, গেইন ট্যাক্স ইত্যাদির হার হ্রাস করলে সেকেন্ডারি মার্কেট চালু হবে এবং একই সম্পত্তি একাধিকবার হাতবদলের ফলে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।
নগদ লেনদেনের সীমা বৃদ্ধির দাবি
রিহ্যাব কোম্পানির নগদ লেনদেনের সীমা ৩৬ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করারও প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে, করবর্ষে ৫ লাখ টাকার বেশি প্রতিটি লেনদেন ও ৩৬ লাখ টাকার ওপরে বার্ষিক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হয়। এ নিয়ম মেনে চললে করপোরেট কর ২৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ হয়। তবে অধিকাংশ আবাসন কোম্পানি এই সুবিধা নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছে রিহ্যাব।
আবাসন খাতে প্রভাব
রিহ্যাব নেতাদের মতে, নিবন্ধন ব্যয় হ্রাস পেলে আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা বাড়বে এবং বাজার আরও গতিশীল হবে। একইসঙ্গে, সেকেন্ডারি মার্কেট চালু হলে পুরোনো ফ্ল্যাট কেনাবেচা সহজ হবে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এনবিআর-এর প্রতিক্রিয়া
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান রিহ্যাবের প্রস্তাবগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি জানান, সরকারকে রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
উপসংহার
আবাসন খাতে বিনিয়োগ ও লেনদেন বাড়াতে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের। রিহ্যাবের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই সুবিধা হবে এবং সম্পত্তি কেনাবেচার হার বাড়বে। এখন দেখার বিষয়, সরকার আসন্ন বাজেটে এই দাবিগুলোকে কতটুকু আমলে নেয়।