পেঁয়াজের আবাদ করে এবার লোকসানের শঙ্কায় কৃষকেরা

চলতি বছর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও দাম কম থাকায় কৃষকদের তেমন লাভ হয়নি। এ অবস্থায় কৃষকেরা হালি পেঁয়াজের ওপর ভরসা করেছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি মাঠে পেঁয়াজের খেতে ‘আগা মরা’ রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে ফলন বিপর্যয় ও বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
রোগের প্রভাব
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর—এই তিন উপজেলাতেই পেঁয়াজগাছগুলোতে আগা মরা রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত গাছগুলো আগা থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেঁয়াজ চাষের পদ্ধতি
পেঁয়াজ চাষের দুটি পদ্ধতি রয়েছে: মুড়িকাটা ও হালি পদ্ধতি। মুড়িকাটা পদ্ধতিতে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়, যা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ঘরে তোলা হয়। অন্যদিকে, হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়, যা মার্চ-এপ্রিলে ঘরে তোলা হয়। সাধারণত হালি পদ্ধতিতেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়, কিন্তু এ বছর হালি পদ্ধতিতে আবাদ করা পেঁয়াজের খেতেই আগা মরা রোগ দেখা দিয়েছে।
কৃষকদের উদ্বেগ
কৃষকেরা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করে এবার ব্যাপক লোকসান দিয়েছেন তাঁরা। হালি পেঁয়াজের দামও ভালো নয়; বরং পেঁয়াজখেতগুলো আগা মরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পেঁয়াজের গুটি বড় হয়নি। পাবনার কৃষকরা জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ টাকা, আর হালি পেঁয়াজে এই খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। কিন্তু পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৩ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে এবং হালি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।
লোকসানের পরিমাণ
এ অবস্থায় প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে কৃষকের। আগা মরা রোগে হালি পেঁয়াজের ফলন কমে গেলে লোকসান আরও বেড়ে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
আবহাওয়ার প্রভাব
স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজগাছের আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। দিনে ভ্যাপসা গরম এবং রাতে শীত, আবার ভোরে কুয়াশার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্য ১০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকদের পরামর্শ
কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, “এ নিয়ে কৃষকের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যেই পেঁয়াজের গুটি মোটামুটি বড় হয়ে গেছে। মাসখানেকের মধ্যেই পেঁয়াজের অনেকটাই উঠে যাবে। গাছের আগা শুকিয়ে যাওয়া রোধের জন্য কৃষকদের পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
পেঁয়াজের আবাদে কৃষকদের বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং রোগের প্রভাবের কারণে তাঁরা লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে কৃষকদের এই সংকট মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে।