অনলাইন ব্যবসার নিয়ম-কানুন: হাইকোর্টের নতুন নির্দেশনা

বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য হাইকোর্ট সম্প্রতি ৯ দফা নির্দেশনা জারি করেছেন, যা দেশের ই-কমার্স খাতকে সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই নির্দেশনাগুলো বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চের রায়ে প্রকাশিত হয়েছে।
নির্দেশনাসমূহের বিস্তারিত বিবরণ
- আইনের পরিপালন: সকলকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে। অনলাইন ব্যবসার মালিক ও ভোক্তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- আইন লঙ্ঘনের প্রতিকার: অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আইনের সমান সুরক্ষা লাভের অধিকারী হবে।
- ব্যবসা পরিচালনার অধিকার: প্রত্যেক নাগরিকের বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অধিকার থাকবে এবং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া তার ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না।
- নিবন্ধন ও অনুমোদন: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের উচিত সব অনলাইন ব্যবসায়ী, মালিক ও সদস্যদের নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তাদের অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেওয়া।
- অননুমোদিত ব্যবসা প্রতিরোধ: কেউ কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের অননুমোদিত অনলাইন ব্যবসা চালাতে বা শুরু করতে পারবে না। এটি নিশ্চিত করা অপরিহার্য যে, কোনো পোশাক খুচরা বিক্রেতা বিদেশি আসল পণ্যের নকল তৈরি করতে বা নকল পণ্য আসল হিসেবে বিক্রি করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার না করে।
- পরিচয় যাচাই: সব ধরনের অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক, মালিক এবং ভোক্তাদের ব্যক্তিগত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যাচাই করা উচিত।
- তথ্য সংরক্ষণ: বিটিআরসির মতো সংশ্লিষ্ট সরকারি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
- গ্রাহক সচেতনতা: সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, তারা অনলাইন গ্রাহকদের সচেতন করে তুলবে যেন অনলাইন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার না হন। গ্রাহকদের অনুমোদন বা নিবন্ধন ছাড়া অনলাইন দোকান বা অনলাইন উদ্যোগ বা অনলাইন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কোনো পণ্য ক্রয় করা উচিত নয়।
- প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের উচিত প্রতারণা করা অনলাইন ব্যবসায়ীদের তাদের অপরাধের জন্য বিচার করার জন্য ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০০৯-এর প্রয়োজনীয় আইনের বিধান সন্নিবেশ করানো।
নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতেমা তনির ব্যবসা পুনরায় চালুর নির্দেশনা
এই রায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতেমা তনির মালিকানাধীন শোরুম ‘সানভিস বাই তনি’র ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অনুসারে যথাযথ পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য হাইকোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশনাসমূহ:
এর আগে, ২০২১ সালের অক্টোবরে হাইকোর্ট গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ অন্যান্য ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে মূসক, টার্নওভার কর, সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সকল ধরনের রাজস্ব আদায় এবং বকেয়াসহ রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও ছয় মাস পর পর রাজস্ব আদায় করে হলফনামা দাখিল করতে রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবসায়ীদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন নিতে বলেছেন উচ্চ আদালত।
গ্রাহক সচেতনতা ও প্রতারণা প্রতিরোধ
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গ্রাহকদের সচেতন করতে হবে যাতে তারা অনুমোদন বা নিবন্ধনবিহীন অনলাইন দোকান বা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় না করেন। এতে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কমবে এবং অনলাইন ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
হাইকোর্টের এই নির্দেশনাগুলো দেশের অনলাইন ব্যবসা খাতকে সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিবন্ধন, পরিচয় যাচাই, তথ্য সংরক্ষণ ও গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতারণা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত হবে।