বানিজ্য

সয়াবিনের পর অস্থির হচ্ছে ছোলার বাজার

সয়াবিন তেলের পর এবার ছোলার বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রমজান শুরুর আগে স্থিতিশীল থাকা এই পণ্যের দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়, যেখানে একদিন আগেও এর দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা। এ ছাড়া মোটা চাল, ময়দা, আদা, হলুদ, জিরা ও এলাচসহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রেতাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

ছোলার দাম বৃদ্ধি

নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহের ঘাটতির কারণেই এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

নয়াবাজারে ছোলা কিনতে আসা মো. আলী হোসেন বলেন, “রোজার আগে ছোলা কিনেছিলাম, এখন আবার কিনতে এসেছি। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেশি দাম চাচ্ছে দোকানদাররা।” খুচরা বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, “রোজার আগে পাইকারি বাজারে ছোলার দাম বাড়েনি। তাই খুচরা বাজারেও দাম স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু বুধবার থেকে পাইকারি বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে, যে কারণে খুচরা বাজারেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।”

চালের বাজারে অস্থিরতা

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দামও বেড়েছে। খুচরা বাজারে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ টাকা। পাইজাম চালের দাম ৬৫ টাকা প্রতি কেজিতে পৌঁছেছে। সরু চালের দামও বেড়েছে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২-৮৫ টাকায়।

কাওরান বাজারের “আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির” মালিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, “রোজার আগ মুহূর্তে মিল মালিকরা মোটা চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা বাড়িয়েছেন। ফলে পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে, যা খুচরা পর্যায়েও প্রভাব ফেলেছে।”

ময়দা ও আটা বাজারের চিত্র

বৃহস্পতিবার বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়, আর খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৭০ টাকা। খোলা ময়দার দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় পৌঁছেছে।

মসলা ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি

নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলার বাজারেও দেখা গেছে দাম বৃদ্ধির প্রভাব। দেশি হলুদ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, যেখানে এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৩৫০ টাকা। আমদানি করা হলুদের দামও বেড়ে হয়েছে ৪২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৩০০ টাকা ছিল। দেশি আদার দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা, আর আমদানি করা আদার দাম ২২০ টাকায় পৌঁছেছে।

এ ছাড়া, জিরা প্রতি কেজি ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে চার দিন আগে এর দাম ছিল ৭৫০ টাকা। ছোট দানার এলাচ প্রতি কেজি ৫৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০০০ টাকা। তেজপাতার দাম ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা প্রতি কেজি।

মাংস ও মুরগির বাজার

বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকায়, দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৪৮০-৫৮০ টাকায়। গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০-১২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান

বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নজরে রেখে রাজধানীর শ্যামপুর থানার জুরাইন বালুর মাঠ বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৭টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সিলেটেও এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। খাদিম নগর এলাকার ‘আরবি এডিবল ফ্রড প্রোডাক্ট’ নামে এক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং মালিক বদরুল ইসলামসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ক্রেতাদের দুর্ভোগ

বাজারে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ ক্রেতারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “বাজারে এসে দেখি সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ময়দা, ছোলা, আদা-হলুদের দাম বাড়ায় সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

উপসংহার

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্রেতাদের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার কি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button