চাপ বাড়ছে আকাশ পথের টিকিটে, চড়া ভাড়াও

আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি ঘিরে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আকাশপথে যাত্রীদের চাপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি, যার ফলে ভাড়াও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। একাধিক এয়ারলাইন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে। এতে করে টিকিট সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে।
টিকিটের উচ্চমূল্য
অনলাইন টিকিট এজেন্সিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের মূল্য অনেক বেশি।
- ঢাকা-সৈয়দপুর রুটের টিকিটের দাম ১২,২৯২ থেকে ১২,৫৮২ টাকা পর্যন্ত।
- ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১১,৩৯৮ থেকে ১৩,৫৪০ টাকা।
- ঢাকা-সিলেট রুটের টিকিটের দাম প্রায় ১০,০০০ টাকা।
- ঢাকা-রাজশাহী রুটের ক্ষেত্রে এই মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩,৩৬৭ টাকায়।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, চাহিদার তুলনায় উড়োজাহাজের সংখ্যা কম থাকায় টিকিটের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি হচ্ছে।
চাহিদা বৃদ্ধির কারণ
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের দ্রুত বিকাশের ফলে যাত্রীর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন এবং পর্যটন স্পটগুলোতে বেড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আকাশপথে যাতায়াতের চাপও বাড়ছে।
এ সম্পর্কে আটাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ)-এর সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে যাত্রীদের খরচের সক্ষমতাও বেড়েছে, যার ফলে বিমান টিকিটের চাহিদা তীব্র হয়েছে। তবে কম মূল্যে টিকিট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।”
উড়োজাহাজ সংকট ও এর প্রভাব
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বর্তমানে চারটি এয়ারলাইন্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে দুটি সংস্থা আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফলে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়ানোর তেমন সুযোগ নেই। বাংলাদেশ বিমানসহ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ক্যাপাসিটি সীমিত থাকায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, যা স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ট্রিউন গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে এয়ারলাইন্সগুলো বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই এ সময়ে কম মূল্যে টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”
সমাধানের উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের মতো বিশেষ সময়ে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা ও টিকিটের দামের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি।
- অতিরিক্ত ফ্লাইট সংযোজন: এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ মৌসুমের জন্য বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।
- টিকিটের দাম নির্ধারণে নীতিমালা: চাহিদা অনুযায়ী মূল্য বৃদ্ধি সীমিত রাখতে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করা যেতে পারে।
- টিকিটের অগ্রিম বুকিং ব্যবস্থা উন্নত করা: যাত্রীরা যাতে আগেভাগে টিকিট কিনতে পারেন, সেজন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
- নতুন এয়ারলাইন্স সংযোজন: অভ্যন্তরীণ রুটে নতুন এয়ারলাইন্স যুক্ত হলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং ভাড়া নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
শেষ কথা
ঈদের সময়ে আকাশপথের চাহিদা বাড়ায় টিকিটের উচ্চমূল্য স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে উড়োজাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগই পারে সাধারণ জনগণের জন্য বিমান ভ্রমণকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করতে।