সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানি

বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সরাসরি ক্রয়-প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ করা হচ্ছে। আজ বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই আমদানি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
এলএনজি আমদানি ব্যয় ও শর্তাবলী
এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জি গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার দরে এলএনজি কেনা হবে, যার মোট ব্যয় হবে ৭৫৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। একইভাবে, সিঙ্গাপুরের গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক ৪৭ মার্কিন ডলার দরে আরেক কার্গো এলএনজি কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৭৪১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
টিসিবির মাধ্যমে মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত
সরকারি ক্রয় কমিটি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এই ডালের প্রতিকেজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ টাকা ৪০ পয়সা, যা মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। টিসিবির জন্য স্থানীয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এই মসুর ডাল সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে। চলতি অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৫০ টনের ক্রয় চুক্তি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ দফায় আরও ১০ হাজার টন ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানি বাতিল
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৈদেশিক উৎস থেকে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে এক লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।
সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প
স্থানীয় সরকার বিভাগের ‘সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প ফেজ-৩’-এর আওতায় কম্পোনেন্ট-১ ইনটেক, ‘র’ ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন ও ‘র’ ওয়াটার পাইপলাইন স্থাপনের পূর্তকাজ যৌথভাবে পেয়েছে চায়না মেশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, কুজু টপলু কোনাট এ এস এবং ইয়োলো রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড। এতে মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রকল্প
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার এবং সার্ভিসেস সাপোর্ট প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে ৪৪০ কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে ৩ লাখ ৯০ হাজার রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও, ৯৫ হাজার ৯৪৪ রোহিঙ্গা নারীকে পুষ্টিবিষয়ক শিক্ষা প্রদান, ১৪ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে সবজি বাগান তৈরিতে সহায়তা এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপে না জড়ানোর জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের জ্বালানি, খাদ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন বিনিয়োগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগের ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে এলএনজি আমদানি জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ উন্নত করতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়ন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।