রমজানের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি: মাছ-মাংস ও সবজির দাম দ্বিগুণ

পবিত্র রমজান মাস ঘিরে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রমজানের চাহিদা মাথায় রেখে বিপুল পরিমাণে ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হলেও বেশ কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও মাছ-মাংস ও সবজির দাম অনেকাংশে বেড়েছে। বিশেষ করে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
তেলের বাজার অস্থির
গত নভেম্বর থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। হাতে গোনা কিছু দোকানে এই তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটের কারণে খোলা তেলের দামও বেড়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাছ-মাংসের মূল্যবৃদ্ধি
রমজান সামনে রেখে মাছ-মাংসের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা ও জোয়ারসাহারা কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মাছ-মাংসের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকা হয়েছে। সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। গরুর মাংস প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস প্রতি কেজি ১২০০ টাকা ছুঁয়েছে। মাছের দামও মাছভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম এখনো সহনশীল, প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
বাড্ডার মুরগি বিক্রেতা মো. সোহেল জানান, ‘বাড়তি চাহিদার কারণে খামারি পর্যায়েই মুরগির দাম বেড়েছে। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
সবজির দাম দ্বিগুণের বেশি
রমজানে ইফতারিতে ব্যবহৃত বেগুন, শসা, লেবুর চাহিদা বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
- বেগুন: প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
- শসা: ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
- লেবু: এক মাস আগেও প্রতি হালি লেবুর দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। এখন তা বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। উন্নত জাতের লেবুর হালি ১০০ টাকা পর্যন্ত গিয়েছে।
বাড্ডার সবজি বিক্রেতা মাহাদী হাসান বলেন, ‘এখন লেবুর অফ সিজন। তাই পাইকারি বাজারেই লেবুর সংকট রয়েছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেগুনের দামও বেড়েছে।’
অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের বড় ধরনের ঘাটতি না থাকলেও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- দেশি পেঁয়াজ: ৪৫ টাকা কেজি।
- ছোলা: ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
- বেসন: মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি।
- চিনি: ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি।
- আলু: ২০ টাকা কেজি।
- দেশি আদা: ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
- দেশি নতুন রসুন: ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।
- আমদানি করা রসুন: ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি।
শীতকালীন সবজির দাম বৃদ্ধি
শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।
- টমেটো: ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
- ফুলকপি: প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
- মূলা: ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
- পেঁপে: ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।
- শিম: মানভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
- গাজর: ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
- কাঁচা মরিচ: ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনের আশ্বাস
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের রমজানে সবকিছুই পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আশা করি, বাজারে সরবরাহজনিত কোনো বড় সমস্যা হবে না।’
ভোক্তা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানিয়েছেন, ‘ভোজ্যতেল নিয়ে যারা কারসাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের একটি অংশ সক্রিয়। যারা ভোক্তার স্বার্থবিরোধী কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভোগ্যপণ্যের রেকর্ড আমদানি
পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা মাথায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি ছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন, যা রেকর্ড পরিমাণ।