বিশ্ব

গাজায় আবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা

ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে আবারও সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার সীমান্তে নতুন করে ট্যাংক ও সেনা মোতায়েন শুরু করেছে, যা হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) উত্তর গাজার সীমান্তে এই শক্তি প্রেরণ করা হয়, যার ফলে অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী রিজার্ভ সেনাকে তলব করেছে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হামাস জানিয়ে দিয়েছে, আগামী শনিবারের মধ্যে তারা আরও তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে, গাজায় হামলা শুরু করবে ইসরায়েল।

যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন

গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে, শনিবারের মধ্যে তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। তবে, চলতি সপ্তাহে হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে মুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এর পরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন, বলেছেন যে, শর্ত অনুযায়ী মুক্তি না দিলে ‘তীব্র লড়াই’ শুরু হবে।

বুধবারই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার ভেতরে ও আশপাশে বাহিনী জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠানো এবং রিজার্ভ বাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। এতে গাজায় নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও হামাসের অবস্থান

ইসরায়েলি সরকারের মন্ত্রীরা ট্রাম্পের দেওয়া হুমকি ‘অনুমোদন’ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, শনিবারের মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া হলে যুদ্ধবিরতি বাতিল হবে। এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “শতাংশের মধ্যেই মুক্তি না দিলে গাজায় নরক নেমে আসবে।”

তবে, হামাসের এক নেতা, সামি আবু জুহরি ট্রাম্পের এই হুমকিকে নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি চুক্তি এবং উভয় পক্ষকেই তা মেনে চলতে হবে। হুমকি দিয়ে এই পরিস্থিতি আরো জটিল করা হবে।”

গাজার মানবিক পরিস্থিতি

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদে গাজা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং তারা খাবার, পানি ও আশ্রয়ের সংকটে ভুগছেন। বর্তমানে গাজার আশপাশের অঞ্চলে আঞ্চলিক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

এই অচলাবস্থা ও সংঘাতের জটিলতা বাড়তে থাকলে মধ্যপ্রাচ্য আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে আসতে পারে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক গুরুতর হুমকি হতে পারে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপট

বিভিন্ন দেশ সংঘাতের উত্তাপ কমাতে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো তাদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করেছে যাতে গাজায় নতুন সংঘাতের ঝুঁকি কমানো যায়। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বিভাজন থাকায়, সমাধান প্রক্রিয়া খুব সহজ হবে না।

এদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংকটকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। তবে, কিছু দেশের এমন অবস্থান রয়েছে, যা গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিভিন্ন শর্ত তুলে ধরছে।

মিসর ও জর্ডানের ভূমিকা

গাজা সংকট নিয়ে আলোচনায় মিসর এবং জর্ডানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবেদল ফাত্তাহ আল-সিসি, যিনি গাজা সংকটের একটি প্রধান মধ্যস্থতাকারী, সম্প্রতি জানান, যদি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের প্রশ্ন উঠতে থাকে, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন না।

অন্যদিকে, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, গাজা পুনর্গঠন করতে হলে, ফিলিস্তিনিদের না সরিয়ে তা করা উচিত। জর্ডান এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, এবং এটি আরব দেশগুলোর সম্মিলিত অবস্থান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই সংকটের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবেই এসেছে। চীনও ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন করার পরিকল্পনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে। এদিকে, আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ গেইতও ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাকে নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, “গাজার কথা বলা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের সরানোর পরিকল্পনা করা হতে পারে।”

সমাপ্তি

ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলের সংকট নতুন মাত্রা ধারণ করছে, এবং এতে নতুন সংঘাতের শঙ্কা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষের মুখে আছেন ইসরায়েল এবং হামাস। যদি পরিস্থিতি না থামে, তবে তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হতে পারে।

এ সময়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা ও দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা যদি সক্রিয়ভাবে সমাধান পেতে না পারে, তবে গাজার মানবিক দুরাবস্থা আরও বাড়বে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button