বানিজ্য

প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি সম্ভব

Advertisement

প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, লক্ষ্যমাত্রা দুই বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাত দিন দিন প্রসার লাভ করছে। চলতি বছর এই খাতে ১১ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তারা আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করাও সম্ভব বলে জানিয়েছেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “আপনারা বড় রপ্তানির টার্গেট নিন। ইপিবি আপনাদের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।”

বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো: রপ্তানির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘দশম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্স্টেনস, ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, চীনা দূতাবাসের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর সং ইয়াং, মেলা কমিটির চেয়ারপারসন এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, বাপার সভাপতি মো. আবুল হাশেম, সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হকসহ আরও অনেকে।

এই মেলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ২২টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (রিমস) যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করেছে।

রপ্তানি বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের প্রসার আরও বাড়াতে হবে। গালফ ফুড ফেয়ারে গিয়ে আমি লক্ষ্য করেছি, আমাদের পণ্যগুলো বেশ প্রতিযোগিতামূলক, তবে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানো দরকার। একই ধরনের পণ্য নিয়ে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে ইউনিক পণ্য তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে।”

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি দুই বছরে ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারবে। আমাদের প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও পণ্য বৈচিত্র্য আছে, যা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। তবে, সরকারের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার সম্প্রতি আমাদের সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের অবস্থান

বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমেই জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাপার সভাপতি মো. আবুল হাশেম বলেন, “এবারের এক্সপোতে প্রচুর বিদেশি ক্রেতা অংশ নিয়েছে, যা আমাদের পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহের প্রমাণ। আমরা ইপিবির সহায়তায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি ব্যবসায়ীদের মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম, এবং আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি।”

রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ

১. পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ: একই ধরনের পণ্য রপ্তানি না করে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ জরুরি। ২. গুণগত মান নিশ্চিতকরণ: আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পণ্যের মান উন্নত করতে হবে। ৩. সরকারি নীতি সহায়তা: রপ্তানিকারকদের জন্য সহজ শুল্কনীতি, কর সুবিধা ও অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করা প্রয়োজন। ৪. বাজার সম্প্রসারণ: নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। ৫. প্রযুক্তির ব্যবহার: উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা দরকার।

উপসংহার

বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি খাত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং এই খাতের উদ্যোক্তারা ২০২৭ সালের মধ্যে রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০৩০ সালের মধ্যে এই রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে, এ লক্ষ্য অর্জনে বাজার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, সরকারি সহায়তা এবং পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button