বানিজ্য

শবেবরাতে মাংস ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, ক্রেতাদের চাপ বাজারে

Advertisement

পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। বিশেষত গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে কিছু এলাকায় দামও বেড়েছে। এ ছাড়া এখনও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট অব্যাহত থাকায় খোলা সয়াবিনের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গরুর মাংস ও মুরগির দাম বৃদ্ধি

গত ছয়-সাত মাস ধরে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও, শবেবরাত ঘিরে চাহিদা বাড়ায় কিছু এলাকায় মাংসের দাম বেড়ে ৮০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। বড় বাজারগুলোতে এখনো আগের দামে বিক্রি হলেও, এলাকার ছোট বাজারগুলোতে বিক্রেতারা বাড়তি দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন।

ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। গত এক-দেড় মাস ধরে প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছিল, তবে গতকাল তা বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি হয়েছে। এ ছাড়া সোনালি জাতের মুরগির দামও গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ টাকা বাড়িয়ে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তেজকুনিপাড়ার মাংস বিক্রেতা রবিউল হাসান জানান, “শবেবরাত উপলক্ষে মানুষ বেশি পরিমাণে মাংস কিনছে, ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।” একই তথ্য জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের নূরজাহান চিকেন হাউসের বিক্রয়কর্মী ইয়াসিন আলী, তিনি বলেন, “অন্যদিনের তুলনায় গতকাল ক্রেতার চাপ দ্বিগুণ ছিল, ফলে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।”

ভোজ্যতেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি

দেশের বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট কাটেনি। এক মাসের বেশি সময় ধরে সরবরাহ ঘাটতির কারণে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য প্রতি লিটার ১৫৭ টাকা হলেও, পাইকারি বাজারে তা ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর রব স্টোরের মালিক মো. নাইম জানান, “পাঁচ কার্টন চাইলেও কোম্পানি মাত্র দুই কার্টন সরবরাহ করছে, যা একদিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা খোলা তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছি।”

মুদি বাজারে ভিড় ও নিত্যপণ্যের দাম

শবেবরাত উপলক্ষে মুদি দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের চাপ বেড়েছে। ক্রেতাদের বেশিরভাগই ছোলা, চিনি, তেল ও মসলা কিনতে এসেছেন।

চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী হলেও, এখনও দাম চড়া। আমদানির কারণে গত এক সপ্তাহে চালের দাম দু-এক টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি থাকলেও রসুনের দাম চড়া। দেশি রসুনের কেজি ১৫০-১৬০ টাকা এবং আমদানি করা রসুনের দাম ২৫০-২৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেশি। আদার দামও বেড়ে বর্তমানে ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে

কিছু কিছু সবজির দাম বেড়েছে, বিশেষ করে বেগুন ও আলুর।

  • বেগুন: কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০-৬০ টাকা
  • আলু: ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকা
  • শিম ও গাজর: ৩০-৪০ টাকা
  • ফুলকপি ও বাঁধাকপি: ২০-২৫ টাকা প্রতি পিস
  • লাউ: ৪০-৬০ টাকা প্রতি পিস
  • কাঁচামরিচ: ৪০-৬০ টাকা প্রতি কেজি

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শামিম আহমেদ বলেন, “দুই-তিন দিনের মধ্যে বেগুনের দাম আরও বাড়তে পারে, কারণ রমজানের সময় এর চাহিদা বেশি থাকে।”


মাছের বাজার স্থিতিশীল

মাংস ও সবজির বাজারে পরিবর্তন হলেও মাছের বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।


উপসংহার

শবেবরাত উপলক্ষে বাজারে মাংস, মুরগি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে, ফলে কিছু পণ্যের দামও বেড়েছে। বিশেষ করে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ক্রেতাদের বাড়তি ব্যয় বহন করতে বাধ্য করছে। এছাড়া মুদি দোকান ও সবজি বাজারেও ভিড় দেখা গেছে। যদিও চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে, তবে রসুন ও আদার বাজার চড়া।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button