বানিজ্য

শেয়ারবাজারের মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত টাস্কফোর্স। পাশাপাশি ইতোমধ্যে যেসব ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে বর্ধিত মেয়াদ শেষে অবলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএসইসি পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এ টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। টাস্কফোর্স গত মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। এতে মিউচুয়াল ফান্ডসংক্রান্ত আইন সংশোধনের মাধ্যমে মেয়াদ শেষে মেয়াদি ফান্ডের অবলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ইউনিটধারীদের মতামত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে মেয়াদি ফান্ডকে বে-মেয়াদিতে রূপান্তরের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে।

মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ নির্ধারণ

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ঘোষণার সময় এর মেয়াদ ও আকার নির্ধারণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হবে না। বর্তমানে বাজারে থাকা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক মেয়াদ শেষে কোনোভাবেই মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। তবে যেসব ফান্ডের মেয়াদ ইতোমধ্যে ১০ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর বর্ধিত মেয়াদ শেষে তা অবলুপ্ত করতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ নীতিমালা

টাস্কফোর্স মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ নীতিমালায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছে। এসব বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে:

  • কোনো মিউচুয়াল ফান্ড থেকে কাউকে কোনো ঋণ বা অগ্রিম প্রদান করা যাবে না।
  • কোনো মিউচুয়াল ফান্ড কোনো একক কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না।
  • মিউচুয়াল ফান্ডের মোট সম্পদের ৩০ শতাংশের বেশি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসেবে রাখা যাবে না।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন

বর্তমান আইনে মিউচুয়াল ফান্ডের ৬০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী, ইকুইটি বা বর্ধিষ্ণু মিউচুয়াল ফান্ডের মোট সম্পদের ৫১ শতাংশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে এবং বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ারবাজারের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে।

ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ অর্থ ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ধরনের তহবিল থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়া অন্য কোনো ইকুইটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে না।

বিএসইসির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল বাস্তবায়ন

টাস্কফোর্সের এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে বিএসইসিকে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে। তবে আইন সংশোধন করে টাস্কফোর্সের সব সুপারিশ গ্রহণ করা হবে নাকি আংশিক বাস্তবায়ন করা হবে, তা নির্ভর করছে বিএসইসির সিদ্ধান্তের ওপর।

টাস্কফোর্সের গঠন ও সদস্যরা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে আইনকানুন সংশোধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশের জন্য গত ৭ অক্টোবর বিএসইসি পাঁচ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এরপর এ সংক্রান্ত সরকারি চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ১০ জানুয়ারি।

টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন:

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন।
  • ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান।
  • নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন।
  • বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোস্তফা আকবর।
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আল-আমিন।

শেয়ারবাজারে প্রভাব

মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ না বাড়ানোর সুপারিশ শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে, ফান্ডের অবলুপ্তির ফলে ইউনিটহোল্ডাররা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এ সুপারিশ কার্যকর হলে বাজারে তরলতার গতি পরিবর্তন হতে পারে। তবে বিএসইসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরই এর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button