
বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কে দিন দিন জটিলতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুল্কারোপ ও বাজার প্রবেশাধিকার ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, তা নতুন মাত্রা পেয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। এ অবস্থায় ট্রাম্পের পাকিস্তানমুখী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—এটা কি কেবল রাজনৈতিক কৌশল, নাকি পারিবারিক ব্যবসার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত?
সুলিভানের অভিযোগ: পারিবারিক ব্যবসার প্রভাব
মার্কিন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার পেছনে মূল কারণ ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ। তাঁর দাবি অনুযায়ী, ট্রাম্প পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ক্রিপ্টো কোম্পানি সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এর ফলে ইসলামাবাদে মার্কিন বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সুলিভানের মতে, কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
পূর্বপটভূমি: যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য বিরোধ
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু বছর ধরেই ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় একাধিকবার ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারত পাল্টা হিসেবে শুল্ক হ্রাস করে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। একই সময়ে, ভারত রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে নতুন বাজার তৈরির লক্ষ্যে। ফলে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হয়ে উঠছে।
পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকার সম্ভাব্য প্রভাব
যদি ট্রাম্প সত্যিই পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকেন, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ওঠানামার হলেও নতুন অর্থনৈতিক চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারে। তবে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিঃসন্দেহে নেতিবাচক বার্তা, কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থকে কেন্দ্র করে নেওয়া সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অনেকের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে নীতি পরিবর্তন হলে তা কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, বৈশ্বিক রাজনীতিতেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য ফলাফল
বর্তমানে পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। বৈদেশিক ঋণ, ডলারের ঘাটতি এবং জ্বালানি নির্ভরতা দেশটিকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে তাকাতে বাধ্য করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পাকিস্তানের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হবে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এ বিনিয়োগ কি পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করবে, নাকি কেবল ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করবে?
“ট্রাম্প পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” — জেক সুলিভান, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাকিস্তানমুখী অবস্থান নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, আবার কেউ একে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভারসাম্য কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর। তবে একথা স্পষ্ট—ট্রাম্পের প্রতিটি পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক নয়, ব্যবসায়িক দিক থেকেও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
এম আর এম – ১১৮২, Signalbd.com