এবারও নির্বাচন ছাড়া নেতৃত্ব পেল খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন

চট্টগ্রামের বৃহত্তম ব্যবসায়িক এলাকা খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনে এবারও নির্বাচন ছাড়াই নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের প্রথম কমিটি ২০০৯ সালে মনোনীতভাবে গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়েও নির্বাচন হয়নি। এবার ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
গতকাল রোববার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। মোট ৪১টি পদের বিপরীতে ৪৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। সোমবার পর্যন্ত বাকি চারজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “শেষ দিনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় কোনো ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি।”
নবনির্বাচিত কমিটির নেতৃত্বে আবদুস সালাম
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন:
- জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি: আহমদ রশীদ আমু
- সহসভাপতি (২ জন): অনিল চন্দ্র পাল ও মো. আবসার উদ্দিন
- সাধারণ সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: আলমগীর পারভেজ
- সহসাধারণ সম্পাদক (২ জন): আব্দুর রাজ্জাক ও মো. রেজাউল করিম আজাদ
- অর্থ সম্পাদক: নুরুল আলম
- সহ-অর্থ সম্পাদক: মীর মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল্লাহ
- সাংগঠনিক সম্পাদক: মোহাম্মদ আবু বক্কর
- সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক: মো. খোরশেদ আলম
- আইনবিষয়ক সম্পাদক: মহিউদ্দিন
- প্রচার, প্রকাশনা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: ফরিদুল আলম
- বন্দর, কাস্টমস ও ভ্যাটবিষয়ক সম্পাদক: রাইসুল ইসলাম
- দপ্তর সম্পাদক: মুহাম্মদ আকবর আলী
এছাড়া ২৫টি নির্বাহী সদস্য পদেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন না হওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এবার ব্যবসায়ীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রত্যাশা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন না হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক ব্যবসায়ী স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চেয়েছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল কাদের বলেন, “সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট প্রক্রিয়া থাকা দরকার। কিন্তু এখানে আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেল।”
অন্যদিকে, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান জানান, “আমরা সব ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করবো। নেতৃত্ব নির্বাচনের এই পদ্ধতিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সবাই যোগ্য এবং ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
খাতুনগঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার। এখানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন। নবনির্বাচিত সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করবো। অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসার পরিবেশ সহজীকরণ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি
অনেক ব্যবসায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি তুলেছেন। তারা চান, ভবিষ্যতে যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয় এবং ব্যবসায়ীদের মতামত সরাসরি প্রতিফলিত হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, “প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গণতান্ত্রিক ধারা থাকা জরুরি। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মতো বড় সংগঠনে নির্বাচন বাধ্যতামূলক করা উচিত।”
উপসংহার
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ছাড়া নেতৃত্ব নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এটিকে স্বাভাবিক মনে করলেও, নির্বাচন চেয়ে অনেকে হতাশ। তবে নতুন নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে বলে আশাবাদী সবাই। আগামী দিনে এই সংগঠন কেমন ভূমিকা রাখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।