বানিজ্য

বোতলজাত ভোজ্যতেলের আমদানি বেশি হলেও বাজারে সংকট, পাচারের আশঙ্কা

বাংলাদেশে বোতলজাত ভোজ্যতেলের আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে, কিন্তু দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কেন হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

আমদানি পরিস্থিতি

বাংলাদেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর আমদানি পরিস্থিতি ভালো। তবে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট অব্যাহত রয়েছে। তারা জানেন না কেন এই সংকট হচ্ছে। বৈঠকে উঠে এসেছে যে, কিছু পরিশোধন কারখানার মালিকেরা অন্য পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বিক্রি করছেন।

বিটিটিসির বৈঠক

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) কার্যালয়ে গতকাল রোববার ভোজ্যতেলের সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিটিটিসির চেয়ারম্যান মইনুল খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান উপস্থিত ছিলেন। দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।

কৃত্রিম সংকট

বৈঠক শেষে বিটিটিসি জানায়, বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যেটি হয়েছে তা কৃত্রিম সংকট এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণপত্রও (এলসি) বেড়েছে একই হারে।

বাজার তদারকি

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। কিছু ব্যবসায়ী অন্যান্য পণ্য কেনার শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করছে, যা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পাচারের আশঙ্কা

বৈঠকে নতুন একটি বিষয় উঠে এসেছে, তা হলো ভোজ্যতেল পাচার বা অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য। প্রতিবেশী দেশে ভোজ্যতেলের মূল্য বেশি হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্তসংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে এবং প্রতিরোধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

উৎপাদনকারীদের তথ্য

বিটিটিসি জানায়, সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি অমিতাভ চক্রবর্তী বৈঠকে জানান, তাঁরা জানুয়ারিতে মোট ৫০ হাজার ৭০০ টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করেছেন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জি এম তসলিম শাহরিয়ার জানান, জানুয়ারিতে তাঁরা মোট ৪৭ হাজার ৬৬৮ টন সরবরাহ করেন।

বাজারের পরিস্থিতি

ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষে এখন পাইপলাইনে প্রায় দেড় লাখ টন ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এই তেল শিগগিরই সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হবে। তবে মাঠপর্যায়ে কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারেন।

ভোক্তাদের উদ্বেগ

ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা চলছে। বাজার তদারকিতে তা ধরা পড়ে না। যারা এটি করছে, তারা সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বোতলজাত ভোজ্যতেলের আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাজারে সংকট এবং পাচারের আশঙ্কা উদ্বেগজনক। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল থাকে এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button