বানিজ্য

তিন মাস বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু

Advertisement

দেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার সীমিত আকারে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় দীর্ঘ তিন মাস বন্ধের পর আবারও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে এই আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমদানিকারকদের দাবি, এই আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সাধারণের নাগালের মধ্যে চলে আসবে। আমদানির খবরেই ইতোমধ্যে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

পেঁয়াজ আমদানির শুরু ও প্রথম চালান

তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে রবিবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। এই আমদানি শুরুর পেছনে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের কঠোর সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। রবিবার বিকেল সোয়া ৪টায় ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে আমদানি শুরু হয়।

প্রথম আমদানিকারক: প্রথম দিন রকি ট্রেডার্স নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করে।

আমদানি মূল্য: প্রতি টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ২৪৫ ডলার

উৎস: এসব পেঁয়াজ ভারতের বিভিন্ন মধ্যপ্রদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

আমদানিকারকরা সকালে পূর্বের আবেদনগুলো নতুন করে সাবমিট করেন এবং প্রথম দিনেই ৫০ জন আমদানিকারক আমদানির অনুমতি পান।

আমদানিকারকদের প্রত্যাশা ও বাজার পরিস্থিতি

আমদানিকারকরা মনে করছেন, এই আমদানি বাজারে সৃষ্ট কৃত্রিম সংকট নিরসন করতে সাহায্য করবে এবং দামকে যৌক্তিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনবে।

দাম কমার দাবি: পেঁয়াজ আমদানিকারক রকি ট্রেডার্সের একজন প্রতিনিধি বলেন, “আমদানির খবরেই দেশে পেঁয়াজের দাম কমে আসছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম সাধারণের নাগালের মধ্যেই চলে আসবে।”

সরকারের সিদ্ধান্ত: তিনি বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠলে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।

আমদানির পরিমাণ: প্রথম দিনে হিলি স্থলবন্দরের ৪ জন আমদানিকারক ১২০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। রকি ট্রেডার্স একাই পেয়েছে ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি।

এই আমদানি বাজারের অস্থিরতা কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আমদানির অনুমতি বন্ধের পূর্বপটভূমি

দেশীয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার গত ৩০ আগস্ট থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রেখেছিল। কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছিলেন, বাজারে পর্যাপ্ত মজুত থাকায় এবং নতুন পেঁয়াজ আসার কারণে কৃষকের স্বার্থ রক্ষার্থে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছিল।

সংকটের সূত্রপাত: কিন্তু আমদানি বন্ধ থাকায় এবং অসাধু চক্রের কারসাজির কারণে গত দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।

সরকারের কঠোরতা: এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সীমিত আকারে আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

পেঁয়াজ আমদানি শুরুর পর হিলি স্থলবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

উদ্ভিদসংগনিরোধ কেন্দ্রের ভূমিকা: হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদসংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা জানান, দেশীয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন দাম নিয়ন্ত্রণে আবারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পরীক্ষা ও সনদ: তিনি বলেন, আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এসব পেঁয়াজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সনদ প্রদান করব। এরপর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাস নিতে পারবেন আমদানিকারকরা।

পেঁয়াজের দামের ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি শুরু হওয়ায় এবং সীমিত আকারে হলেও বাজারে পেঁয়াজ প্রবেশ করায় দামের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হবে।

প্রাথমিক প্রভাব: আমদানির খবরেই দাম কমতে শুরু করেছে, যা প্রমাণ করে যে, মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কৃত্রিম সংকট ছিল।

ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা: কৃষি উপদেষ্টার দেওয়া ৭০ টাকা মূল্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে এবং বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও কারসাজির সুযোগ না পায়।

দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়া দেশের পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। তবে এই আমদানি যাতে সীমিত না হয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় এবং সিন্ডিকেট বা কারসাজির সুযোগ না পায়, সেদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও তদারকি সংস্থাকে কঠোর নজর রাখতে হবে। অন্যথায়, এই আমদানি প্রক্রিয়াও অসাধু চক্রের হাতে চলে যেতে পারে।

এম আর এম – ২৫৪০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button