বিশ্ব

ঈদের আগে লেবাননে একাধিক বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল

Advertisement

ঈদুল আজহার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা ও আশপাশের অঞ্চলে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে সংঘটিত এ হামলায় ইসরায়েলের দাবি, তারা হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ ড্রোন কারখানাকে লক্ষ্য করেই আঘাত হেনেছে।

লেবাননের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দক্ষিণ বৈরুতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। রয়টার্সের প্রকাশিত ছবিতেও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ভবন ও এলাকা দেখা গেছে

ইসরায়েলের দাবি ও হিজবুল্লাহর টার্গেটিং:

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর একটি ‘গোপন ইউনিট’কে টার্গেট করেছে যারা হাজার হাজার ড্রোন তৈরি করছিল ভূগর্ভস্থ স্থাপনায়। ওই ড্রোন প্রকল্পে ইরানের অর্থায়ন রয়েছে বলেও দাবি করেছে IDF।

IDF-র পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা বৈরুতের যে ভবনগুলোতে হামলা চালিয়েছি সেগুলোতে হিজবুল্লাহর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ড্রোন উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছিল। আমরা নাগরিক হতাহতের ঝুঁকি এড়াতে হামলার আগে সতর্ক বার্তা পাঠাই।”

তবে এই হামলা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছে লেবানন

যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ?

গত ছয় মাস ধরে ইসরায়েল ও ইরান-সমর্থিত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চলছিল। তবে বৃহস্পতিবারের এই হামলাকে সে চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন দেশটির নেতারা।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম এক টুইটবার্তায় বলেন, “এই হামলা লেবাননের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর একটি সংগঠিত হুমকি। ঈদের ঠিক আগে এই হামলা পর্যটন খাত ও অর্থনীতিকেও ধাক্কা দেবে।”

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেন, “বৈরুতের ওপর এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও পূর্ববর্তী চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে।”

হিজবুল্লাহর নীরবতা

এ পর্যন্ত হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা হিজবুল্লাহকে পুনরায় সক্রিয় প্রতিরোধে প্ররোচিত করতে পারে, যা দক্ষিণ লেবাননে আবারও সংঘাত শুরু করতে পারে।

পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির পটভূমি:

২০২৪ সালের শেষ দিকে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে এই চুক্তিটি হিজবুল্লাহ নয়, বরং লেবাননের সেনাবাহিনীর সঙ্গে হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং দক্ষিণ লেবাননের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নেয় লেবাননের সেনাবাহিনী।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল হয়তো হিজবুল্লাহকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে যাতে তারা দক্ষিণ লেবানে কোনো সামরিক প্রস্তুতি না নিতে পারে।

পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ:

অবসরের প্রাক্কালে এমন হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতেই এ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ মিশন (UNTSO) জানায়, “ঈদের মত উৎসবের ঠিক আগমুহূর্তে এমন হামলা লেবাননের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রচেষ্টায় বড় বাধা।”

ঈদের ঠিক আগে ইসরায়েলের এমন কৌশলগত বিমান হামলা শুধু লেবাননের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলেনি, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার দিকে, যা ভবিষ্যতের সংঘাতের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button