বানিজ্য

 বিশ্ববাজারে ফের কমলো স্বর্ণের দাম

Advertisement

মার্কিন সুদের হার ও বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কারণে আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নতুন করে কমেছে।

বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণের দাম কমেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার বৃদ্ধির কঠোর সংকেত পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্বর্ণের দাম একদিনে অন্তত ৩ শতাংশ নেমে গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দামও উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে দাম হ্রাসের কারণ

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ডের দাম ১.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রতি আউন্স ৪,০৯২.৭২ ডলারে নেমে আসে। এদিকে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার দামে ২.৪ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪,০৯৪.২০ ডলারে স্থির হয়েছে।

হাই রিজ ফিউচারসের মেটালস ট্রেডিং পরিচালক ডেভিড মেগার বলেন, ডিসেম্বরে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাবে এই প্রত্যাশা দুর্বল হওয়ায় স্বর্ণের বাজার চাপের মুখে পড়েছে। ফেডের সতর্ক অবস্থান এবং নতুন অর্থনৈতিক তথ্যের ঘাটতি বাজারকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, বড় বাজার ধসের সময় মার্জিন কল এলে ট্রেডাররা ঝুঁকিহীন সম্পদ যেমন স্বর্ণও বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এ কারণেই স্বর্ণের দাম এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয়

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে জানিয়েছে, ভরিতে একলাফে ৫,৪৪৭ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮,২৭২ টাকা। নতুন দাম রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হবে।

২২ ক্যারেটের পাশাপাশি, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৮,৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭০,৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি দাম ১ লাখ ৪১,৭১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত বাজুস মোট ৭৭ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে। এর মধ্যে ৫৩ বার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২৪ বার।

সাম্প্রতিক মূল্য ওঠানামা

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ৪,২১১ ডলারে পৌঁছেছিল। এর আগে দেশে দাম কয়েক দফা বৃদ্ধি পায়। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৫,২৪৮ টাকা বেড়ে ২ লাখ ১৩,৭১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বিশ্ববাজারে দাম হ্রাসের প্রভাবে বাংলাদেশে দাম সমন্বয়কে প্রতিফলিত করা হলো। এর ফলে ক্রেতারা সাময়িকভাবে স্বর্ণের বাজারে কিছুটা শিথিলতা অনুভব করতে পারেন।

প্রভাব ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন সুদ হার ও বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারের মূল চালিকা শক্তি। যখন সুদের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে, বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের মতো ঝুঁকিমুক্ত সম্পদ বিক্রি করে নগদে পরিণত করতে চান। এর ফলে স্বর্ণের দাম হ্রাস পায়।

বাংলাদেশের বাজারে এই পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলে স্বর্ণ ব্যবসা ও ক্রেতাদের ওপর। গহনা খাতের ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হলেও, দীর্ঘমেয়াদি দামের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ফরেক্স ডটকমের বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাযাকজাদা বলেন, “বাজারের ধসের সময় বিনিয়োগকারীরা সব সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হন। এতে স্বর্ণের দাম অস্থির হয়ে পড়ে।”

অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর পরিস্থিতি

শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ধাতুর দামও কমেছে। স্পট সিলভার ২.৮ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৫০.৮৪ ডলারে নেমেছে, যদিও সপ্তাহের হিসাবে এটি ৫.২ শতাংশ বেড়েছে। প্লাটিনামের দাম ২.১ শতাংশ কমে ১,৫৪৭.৩০ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২.৮ শতাংশ কমে ১,৩৮৭.২৫ ডলার হয়েছে। সপ্তাহের হিসেবে দুটির দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম সাময়িকভাবে হ্রাস পেয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং মার্কিন সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব কেমন হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্ক থাকা এবং বাজারের ওঠানামা মনিটর করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য স্বর্ণের দামের ওঠানামা বিনিয়োগ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মার্কিন সুদের হার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্ববাজারে ফের স্বর্ণের দাম কমেছে। বাংলাদেশেও ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে অস্থিরতা থাকলেও এটি ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের জন্য সতর্কতার বার্তা বহন করে।

এম আর এম – ২২৫০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button