বানিজ্য

বেক্সিমকো গ্রুপের রিসিভার বরখাস্ত, নতুন রিসিভার হিসেবে নিয়োগ পেলেন খসরু পারভেজ

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের রিসিভার মো. রুহুল আমিনকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক নির্বাহী পরিচালক খসরু পারভেজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন।

বেক্সিমকো গ্রুপের রিসিভার হিসেবে মো. রুহুল আমিনের দায়িত্ব ছিল গ্রুপটির বিভিন্ন কোম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রত্যাশিত সাফল্য দেখাতে না পারায় সরকার তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন রিসিভারের অধীনে গ্রুপটির আর্থিক পুনর্বিন্যাস ও সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হবে।

হাইকোর্টের আদেশে রিসিভার নিয়োগ

২০২৪ সালের নভেম্বরে হাইকোর্টের এক আদেশের ভিত্তিতে বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রুপটির আর্থিক অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খলতা ফেরানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। রিসিভারের দায়িত্ব ছিল বেক্সিমকোর বিভিন্ন কোম্পানির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, অর্থনৈতিক অনিয়ম প্রতিরোধ এবং ঋণ পুনরুদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখা।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, বেক্সিমকোকে ঘিরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে:

  1. লে-অফ করা ১৩টি কোম্পানি বন্ধ ঘোষণা: অনির্ভরযোগ্য কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।
  2. রিসিভার বরখাস্ত: মো. রুহুল আমিনের পরিবর্তে খসরু পারভেজকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
  3. শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পরিশোধ: বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ার বিক্রি করে লে-অফ করা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।

বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি

শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বেক্সিমকোর ঋণ কেলেঙ্কারিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক দুর্নীতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির চেয়েও বড় কেলেঙ্কারি করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ।” গ্রুপটি বস্ত্র ও পোশাক খাতের অন্তত ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১৬টি অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ।

বেক্সিমকো শিল্পপার্কের অধীনে থাকা ৩২টি কোম্পানির মধ্যে অর্ধেকের বেশি কোনো বাস্তব অস্তিত্ব রাখে না। এ ধরনের অনিয়মের ফলে ঋণপ্রদানকারী ব্যাংকগুলোও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার এই সমস্যার সমাধানে দ্রুত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।

সালমান এফ রহমানের ভূমিকা

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।

নতুন রিসিভারের দায়িত্ব

নতুন রিসিভার খসরু পারভেজের অধীনে বেক্সিমকো গ্রুপের কার্যক্রমের সুশাসন নিশ্চিত করতে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। তাঁর প্রধান দায়িত্বের মধ্যে থাকবে:

  • আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ: কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের সঠিকতা যাচাই করা।
  • ঋণ পুনরুদ্ধার: ব্যাংকগুলোর বকেয়া ঋণ দ্রুত পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া।
  • অস্তিত্বহীন কোম্পানির তদন্ত: অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।

ভবিষ্যতের করণীয়

সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের অনিয়ম দূর করে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে এরূপ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button