দেশে আবারও কমানো হয়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অটোগ্যাসের দাম। নভেম্বর মাসের জন্য নতুন এই দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চলতি মাসে ১২ কেজির গৃহস্থালি সিলিন্ডারের দাম ২৬ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে অটোগ্যাসের দামও কিছুটা কমানো হয়েছে।
নতুন এই দর ২ নভেম্বর (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারা দেশে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে বিইআরসি।
বিইআরসি’র ঘোষণা: কতটা কমলো দাম
রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নভেম্বর মাসের জন্য নতুন দাম ঘোষণা করেন বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
তিনি জানান, “নভেম্বর মাসের জন্য ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের খুচরা দাম ১ হাজার ২৪১ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মূল্য সমন্বয় মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাসের দামের পরিবর্তনের কারণে করা হয়েছে।”
বিইআরসি’র ঘোষণামতে, প্রতি কেজি এলপিজির দাম এখন ১০১ টাকা ২৫ পয়সা, যা পূর্বে ছিল ১০৩ টাকা ৪২ পয়সা। ফলে, এলপিজির দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ২ টাকা ১৭ পয়সা কমেছে।
অটোগ্যাসের দামও কমেছে
নভেম্বর মাসে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি অর্থাৎ অটোগ্যাসের দামও কিছুটা কমানো হয়েছে। বিইআরসি জানিয়েছে, অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৫৫ টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৫৬ টাকা ৭৭ পয়সা। অর্থাৎ লিটারপ্রতি প্রায় ১ টাকা ১৯ পয়সা কমেছে।
এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশের সব অটোগ্যাস স্টেশনে নতুন মূল্য কার্যকর হয়েছে।
গত মাসেও কমেছিল এলপিজির দাম
এর আগেও অক্টোবর মাসে এক দফা কমানো হয়েছিল এলপিজির দাম। তখন ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৭০ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ২৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ, দুই মাসে মোট ৫৫ টাকা কমানো হয়েছে গৃহস্থালি ব্যবহারের এলপিজির দাম।
২০২৪ সালের শেষ ভাগ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তরল গ্যাসের দামে ওঠানামা চলছে। বিশ্ববাজারে দাম কমলে সেই প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে, এবং বিইআরসি প্রতি মাসে নতুন দাম নির্ধারণ করছে।
কেন পরিবর্তন হয় এলপিজির দাম
বাংলাদেশে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের মূল্য, ডলারের বিনিময় হার এবং আমদানি ব্যয় বিবেচনায়।
বিইআরসি আন্তর্জাতিক বাজারে সৌদি কোম্পানি ‘আরামকো’র ঘোষিত দাম (Saudi Aramco Contract Price) অনুসারে স্থানীয় বাজারে দাম নির্ধারণ করে।
যেহেতু বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রায় ৯৫ শতাংশ এলপিজি আমদানি নির্ভর, তাই বিশ্ববাজারে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধি সরাসরি প্রভাব ফেলে স্থানীয় দামে।
গৃহস্থালি ও ব্যবসায়িক খরচে প্রভাব
গৃহিণী থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী—সবার জন্য এই দামের হ্রাস সামান্য হলেও স্বস্তির খবর। রান্নার কাজে ব্যবহৃত ১২ কেজির সিলিন্ডার এখন আগের চেয়ে কিছুটা সাশ্রয়ী হবে।
রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির এক প্রতিনিধি বলেন, “এলপিজির দাম কমায় আমাদের মাসিক খরচ কিছুটা কমবে। যদিও কমানোর হার খুব বেশি নয়, তবে ধারাবাহিকভাবে যদি দাম কমতে থাকে, তাহলে ব্যবসায় ভালো প্রভাব পড়বে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এলপিজির দাম কমায় সাধারণ ভোক্তারা উপকৃত হবেন, তবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি বা আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন অস্থিরতা দেখা দিলে আবারও দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
বিইআরসি’র ধারাবাহিক সমন্বয় নীতি
গত এক বছরে বিইআরসি মোট চার দফায় এলপিজির দাম কমিয়েছে, আবার সাত দফায় বাড়িয়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার কারণেই এই সমন্বয় করতে হয়।
বিইআরসি জানায়, প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা আন্তর্জাতিক বাজারের গড় মূল্য বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী নতুন দাম ঘোষণা করে।
এই নীতি অনুসারে নভেম্বর মাসের দামও নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েল ও প্রোপেন-বিউটেনের দাম স্থিতিশীল থাকলে ডিসেম্বরেও বাংলাদেশের এলপিজির দাম আরও কিছুটা কমতে পারে।
একজন জ্বালানি অর্থনীতিবিদ বলেন, “এলপিজির দাম কিছুটা কমানো হলেও, দেশে পরিবহন ও ডলারের বিনিময় হারের কারণে এটি আরও কিছুটা স্থিতিশীল করা দরকার। ভোক্তারা যেন ধারাবাহিকভাবে সুবিধা পান, সেই লক্ষ্যেই বিইআরসি কাজ করছে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমান বিশ্ববাজারের প্রবণতা অনুযায়ী, এলপিজির দাম আরও কিছুদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পরিবহন খরচ এবং ডলারের হার—সবকিছুই ভবিষ্যতের দামে প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে এলপিজির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ লাখ পরিবার নিয়মিতভাবে এলপিজি ব্যবহার করছে। তাই দাম কিছুটা কমায় সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক চাপে সামান্য হলেও স্বস্তি এসেছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, “বাজার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক জ্বালানি মূল্যের ওপর নির্ভর করেই আগামী মাসগুলোতে এলপিজির মূল্য ওঠানামা করবে।”
এম আর এম – ২০৪৬,Signalbd.com



