দেশের বাজারে আবারও বড় পরিমাণে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এবার ভরিতে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৪ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের নতুন দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৯ টাকা।
বাজুস জানিয়েছে, নতুন এই মূল্য বুধবার (২৯ অক্টোবর) থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে। সংগঠনটির মতে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণ বা ‘পিওর গোল্ড’-এর দাম কমে যাওয়ায় স্বর্ণের দাম পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বর্ণের দামের হালনাগাদ তালিকা
বাজুসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী,
- ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ প্রতি ভরি ১,৯৩,৮০৯ টাকা
- ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১,৮৪,৯৭৬ টাকা
- ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১,৫৮,৫৪৪ টাকা
- আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ভরি ১,৩২,৫৬৭ টাকা
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুসের নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি নতুন দামের সঙ্গে প্রযোজ্য হবে। তবে গহনার নকশা ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
গত কয়েক মাসে স্বর্ণের দামে টানা ওঠানামা
চলতি বছর বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম অভূতপূর্বভাবে ওঠানামা করছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে একাধিকবার। সর্বশেষ ২২ অক্টোবর বাজুস ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। আর তার আগের সপ্তাহেই দাম ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৭ টাকা।
বাজুসের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত মোট ৬৯ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪৮ বার, আর কমেছে ২১ বার।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম সাম্প্রতিক সময়ে কমতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমে আসা, ডলার ইনডেক্সের শক্তিশালী অবস্থান এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে স্বর্ণের চাহিদা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম গত এক সপ্তাহে গড়ে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যা বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বাজুসও আন্তর্জাতিক বাজারের এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম পুনর্নির্ধারণ করছে বলে জানায়।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকার বানানিজ্যিক এলাকায় একাধিক জুয়েলার্স মালিক জানিয়েছেন, হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। অনেকে দাম কমার পর নতুন গহনা কেনার পরিকল্পনা করছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার জুয়েলার্স ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ বলেন, “দাম কমে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন, দাম কমলেই কিনবেন—এখন তারা দোকানে আসছেন।”
স্বর্ণ ব্যবসায় বিশেষজ্ঞদের মত
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, “দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মূলত নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজার, ডলার রেট এবং স্থানীয় চাহিদার ওপর। সম্প্রতি ডলারের স্থিতিশীলতা ও তেজাবি স্বর্ণের দামে পতন দেখা দেওয়ায় বাজুসের এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।”
তিনি আরও বলেন, “এই কমানো দাম বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ভবিষ্যতে ডলারের বাজার ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী সমন্বয়।”
ভবিষ্যৎ প্রবণতা ও সম্ভাবনা
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আরও কিছুদিন স্থিতিশীল থাকে, তাহলে বাংলাদেশের বাজারেও দাম স্থির থাকতে পারে। তবে ডলার রেট বা আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে আবারও সমন্বয় হতে পারে।
বাজার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমানে অনেক ক্রেতা অপেক্ষায় রয়েছেন—দাম আরও কিছুটা কমলে তখন তারা বিনিয়োগ বা গহনা কেনার দিকে ঝুঁকবেন।
স্বর্ণের দামে এ ধরনের বড় পতন সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির হলেও, জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। তাদের মতে, ঘন ঘন দামের ওঠানামা ব্যবসায় স্থিতিশীলতা ব্যাহত করছে।
তবে অর্থনীতিবিদদের অভিমত—বাজারের এই স্বাভাবিক সমন্বয় অর্থনীতির জন্য ভালো, কারণ এটি চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কোন দিকে যায়, এবং তার প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে আরেক দফা সমন্বয় আসে কিনা।
এম আর এম – ১৯৮২,Signalbd.com



