লন্ডনের টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টে শুক্রবার এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। ভারতের সুপরিচিত গায়ক অরিজিৎ সিংকে নিয়ে এই কনসার্টে হাজির ছিলেন হাজার হাজার ভক্ত। কিন্তু কনসার্ট চলাকালীন হঠাৎ স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্তৃপক্ষ, যা ভক্তদের মধ্যে আক্রোশ সৃষ্টি করেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কনসার্টের সময়সূচি ও অরিজিৎ সিংয়ের পারফরম্যান্স
টটেনহ্যাম হটস্পার স্টেডিয়াম, যা মূলত ফুটবল ম্যাচের জন্য পরিচিত, শুক্রবারের সন্ধ্যায় পরিণত হয়েছিল একটি সঙ্গীত উৎসবের মঞ্চে। অরিজিৎ সিং তার জনপ্রিয় গান ‘সইয়ারা’, ‘ঝুমে জো পাঠান’, ‘চান্দনি রাত’, এবং ‘তুমি চলো’ সহ আরও বহু হিট গান পরিবেশন করেন। কনসার্টের প্রথম থেকেই স্টেডিয়াম জুড়ে ভক্তরা গান ও নৃত্য উপভোগ করতে থাকেন।
কনসার্টের ভিড় এবং উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি গানের সঙ্গে ভক্তরা মোবাইলে ছবি ও ভিডিও তুলছিলেন, যা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছিল। অরিজিৎ সিং তার গানের জাদুতে পুরো স্টেডিয়ামকে মাতিয়ে রেখেছিলেন।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা
তবে রাত সাড়ে দশটার সময়, যখন কনসার্ট তার নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করছিল, হঠাৎ স্টেডিয়ামের সকল আলো নিভে যায়। পর্যবেক্ষক এবং ভক্তরা জানান, এই সময় অরিজিৎ ‘দেবা দেবা’ গানটি পরিবেশন করছিলেন। গানটির মাঝপথেই অপ্রত্যাশিতভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গানটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি।
কনসার্ট আয়োজক এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় স্টেডিয়ামের নির্ধারিত সময়সীমা লঙ্ঘন হওয়ার কারণে। তবে অনেক ভক্ত এবং সংগীত বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটি অতিরিক্ত রigid নিয়মের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। অনেকেই স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে তারা কনসার্টের আনন্দ ভঙ্গ করেছে। ভক্তরা উল্লেখ করেছেন যে, অরিজিৎ সিং এমন জনপ্রিয় একজন শিল্পী যে, তার জন্য সময়সীমা সীমিত করে রাখা ঠিক ছিল না।
একজন ভক্ত বলেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কনসার্টের জন্য অপেক্ষা করেছি। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আমাদের অভিজ্ঞতা ধ্বংস হয়ে গেল। অরিজিৎ সিং আমাদের চোখের সামনে গান শেষ করতে পারেননি।”
কনসার্টের প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ
বৃহৎ আকারের কনসার্টে বিদ্যুৎ সংযোগের স্থিতিশীলতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্টেডিয়ামের আলো, সাউন্ড সিস্টেম এবং বড় পর্দার LED প্রদর্শন সবই বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর নির্ভর করে। কোনও ধরনের সময়সীমা বা নিরাপত্তা বিধি না মানা হলে, এই ধরনের ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
একটি সংগীত বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “এ ধরনের বড় আয়োজনে প্রায়শই পাওয়ার ব্যাকআপ ব্যবস্থার ব্যবস্থা থাকে। তবুও যদি হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়, এটি ভক্তদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সংবাদ
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও খবর হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টটি ছিল লন্ডনের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক কনসার্ট। এমন পরিস্থিতিতে স্টেডিয়ামের আচরণ ভক্তদের মন খারাপ করেছে।
অরিজিৎ সিংয়ের প্রতিক্রিয়া
অরিজিৎ সিং নিজে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি, তবে তার নিকটতম সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে প্রকাশিত কিছু সূত্রে জানা গেছে যে তিনি ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে তিনি তাদের সঙ্গে পুরো অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারেননি।
ভক্ত ও সংগীতপ্রেমীদের দৃষ্টিকোণ
এ ধরনের পরিস্থিতি ভক্তদের জন্য হতাশাজনক হলেও, তারা এখনো গায়কের প্রতি ভালবাসা বজায় রেখেছেন। অনেকেই কনসার্টের ছোট অংশের ভিডিও এবং ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এতে করে অরিজিৎ সিংয়ের জনপ্রিয়তা আবারও প্রমাণিত হলো।
একটি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অরিজিৎ সিং আমাদের হৃদয়ে গান গাইতে থাকবেন। স্টেডিয়ামের এই ছোট অসুবিধা আমাদের আনন্দকে কমাতে পারে না।”
কনসার্ট শিল্প ও বড় আয়োজনের শিক্ষা
এই ঘটনা থেকে বড় আয়োজকরা শিক্ষা নিতে পারেন। বড় কনসার্টের জন্য সময়সীমা, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি এবং ভক্তদের অভিজ্ঞতা—all-ই গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া এমন বড় আয়োজনে এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া সহজ।
লন্ডনের এই অরিজিৎ সিং কনসার্টে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া ঘটনা ভক্তদের মনে হতাশা সৃষ্টি করলেও, সংগীতপ্রেমীরা এখনো তার পারফরম্যান্সকে মনে রাখছেন। আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত এই ঘটনা বড় আয়োজক এবং স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
অরিজিৎ সিংয়ের গান এবং তার ভক্তদের ভালোবাসা এমনকি এই ছোটখাটো সমস্যার মধ্যেও অক্ষুণ্ণ থেকে যায়। পরবর্তীতে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
MAH – 12720, Signalbd.com



