বানিজ্য

ডিমের বাজারে উত্তাপ, ক্রেতারা বিপাকে

Advertisement

 ডিমের দাম কয়েক সপ্তাহে লাফিয়ে বেড়েছে। পাড়া-মহল্লা থেকে হোটেল পর্যন্ত ক্রেতারা এই উর্ধ্বমুখী মূল্যে সমস্যায় পড়েছেন। খামারিরা সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও শীতে মুরগি কমানোর আশঙ্কায় আগেভাগেই দাম বাড়াচ্ছেন।

গরীবদের প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত ডিমের দাম সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে লাল ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১০ টাকা বাড়ার পর পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দাম প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে পৌঁছেছে। ক্রেতারা হোটেল বা সাধারণ সংসারে ডিমের উপর নির্ভরশীল থাকলেও এই দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

দাম বৃদ্ধির কারণ

পোল্ট্রি খামারিদের মতে, সরবরাহে তেমন ঘাটতি নেই। তবে শীতকালে মুরগির উৎপাদন কমতে পারে বলে আগেভাগেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। খামারিরা জানান, প্রতিটি ডিম উৎপাদনের খরচ প্রায় ১০ থেকে ১১ টাকা। এর মধ্যে ফিড, ওষুধ, মুরগির বাচ্চা এবং শ্রমিকদের মজুরি অন্তর্ভুক্ত। এই খরচকে সামলাতে খামারিরা দাম বাড়ানোর পথ অবলম্বন করেছেন।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকাররা নির্দিষ্ট মূল্যের বাইরে বিক্রি করতে দিতে চায় না। একেক এলাকার ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ একেক ব্যবসায়ীর হাতে।

কয়েক মাস আগে ডিমের দাম ছিল প্রায় ১২০ টাকার আশপাশে। এই সময়ে অন্যান্য পণ্যের দামও ক্রমবর্ধমান, যা ক্রেতাদের অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে। পোল্ট্রি খামারিরা বলছেন, বাজারে দাম বাড়ানোর নেপথ্যে মূলত শীতের প্রভাব এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিমের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন দাম বৃদ্ধি সাময়িক হলেও ক্রেতাদের ওপর চাপ ফেলতে পারে। পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও শীতকালে ডিমের দাম লাফিয়ে বেড়েছে, কিন্তু এবার দাম বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে বেশি।

ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া

ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। পাড়া-মহল্লার সাধারণ মানুষ বলেন, “মাছ-মাংসের দামের ওঠানামা থাকে, কিন্তু অন্তত ডিম সাশ্রয়ী থাকার কারণে আমরা খেতে পারি। এখন ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।”

হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকরাও সমস্যায় পড়েছেন। ভুনা বা ভাজা ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা অতীতের মূল্যে খাবার পরিবেশন করতে পারছেন না।

বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠনের ভূমিকা

বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন হিসেবে জানিয়েছে, যদি করপোরেট সিন্ডিকেট ভাঙা না যায়, তবে ১ নভেম্বর থেকে উৎপাদন স্থগিত করার হুঁশিয়ারি রয়েছে। সংগঠনটি আশা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে, না হলে দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, একাধিক চক্রের কারণে দাম স্বাভাবিক রাখাটা কঠিন। বিশেষ করে বড় শহরের বাজারে এই চক্রগুলো দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বিশ্লেষণ

ডিমের দাম বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ না করলে দাম আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি, খামারিরা উৎপাদনের খরচ এবং ফিডের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দাম বাড়াচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংস্থাপনাগত পদক্ষেপ ছাড়া বাজারে স্বাভাবিকীকরণ কঠিন। যদি দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে সাধারণ মানুষের প্রোটিন গ্রহণের চাহিদা প্রভাবিত হবে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।

ডিমের বাজারে সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি ক্রেতাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন খরচ এবং শীতকালীন প্রভাব এই পরিস্থিতির পেছনে অন্যতম কারণ। বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে ডিমের দাম কিভাবে ওঠানামা করবে তা নির্ভর করছে উৎপাদন, সরবরাহ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের ওপর।

এম আর এম – ১৯২১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button