সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ, এক ভরির দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) দেশের বাজারে স্বর্ণের নতুন দাম ঘোষণা করেছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
স্বর্ণের নতুন দাম ঘোষণা
রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে বাজুস থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হবে। নতুন দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায়।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম পড়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ টাকা।
পূর্ববর্তী দাম ও সমন্বয় ইতিহাস
গত ১৪ অক্টোবর বাজুস দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল। তখন ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। এরপর মাত্র ছয় দিনে নতুন সমন্বয়ের মাধ্যমে দাম আরও ১ হাজার ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে মোট ৬৬ বার। এর মধ্যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮ বার, এবং কমানো হয়েছে ১৮ বার। গত বছর ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল।
স্বর্ণের বাজারে অন্যান্য ক্যারেট ও ভ্যাট সংক্রান্ত তথ্য
বাজুসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্বর্ণ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মান অনুযায়ী মজুরির হার ভিন্ন হতে পারে।
বাজারে ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকায়, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ টাকায়।
রুপার বাজারে স্থিতিশীলতা
স্বর্ণের দামের বৃদ্ধির পরও দেশে রুপার বাজারে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০৫ টাকায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রুপার দাম। ২১ ক্যারেটের রুপা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৯১৪ টাকায়, ১৮ ক্যারেটের রুপা ৫ হাজার ৭৪ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ৩ হাজার ৮০২ টাকায়।
স্বর্ণের দামের প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বর্ণের এই উর্ধ্বমুখী দাম সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বিবাহ, উৎসব ও বিনিয়োগের সময় স্বর্ণ ক্রয়কারীরা এই দাম বিবেচনা করবেন। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজুসের এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ
স্বর্ণের বাজারে দাম বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, স্থানীয় চাহিদা এবং তাজা বাজারে সরবরাহের চাপকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করছে।
এছাড়া, বাংলাদেশি ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে থাকেন। ফলে দাম বৃদ্ধির খবর দ্রুত বাজারে প্রভাব ফেলে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে ওঠাপড়ার সাথে বাংলাদেশের বাজারও সামঞ্জস্য করবে। ক্রেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাজার পর্যবেক্ষণ এবং বিনিয়োগের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বাজুসের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী তারা আরও সমন্বয় করতে পারে, যা ক্রেতাদের জন্য সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন প্রয়োজন।
স্বর্ণের বাজারে এ বছরের সর্বোচ্চ দাম প্রতিফলিত করছে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের চাপ। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা প্রয়োজন হলেও, স্বর্ণ এখনও বাংলাদেশে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত।
এম আর এম – ১৮৪৬,Signalbd.com