আঞ্চলিক

সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজ বিস্ফোরণ: দগ্ধ পরিবারের আরও একজনের মৃত্যু

Advertisement

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ফ্রিজ কম্প্রেসর বিস্ফোরণে দগ্ধ পরিবারের আরও একজন মারা গেছেন। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর চার বছর বয়সী শিশুকন্যা জান্নাত আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বেলা ১টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনা সাথে সাথে এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় একই পরিবারের বাবা হাসান গাজীও মৃত্যুবরণ করেন। এর মাধ্যমে এই দগ্ধ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজনে। শিশুটির মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক শাওন বিন রহমান। তিনি জানান, “শিশুটি জান্নাতের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসার পরও তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। আজ বেলা ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ভোরে তার বাবা হাসান গাজীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে শিশুটির মা সালমা ও অন্য এক পরিবার সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”

ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা

ঘটনার সূত্রপাত ২২ আগস্ট শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায়। সিদ্ধিরগঞ্জের একটি আবাসিক এলাকায় আচমকা ফ্রিজের কম্প্রেসর বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় একই পরিবারের নয়জন সদস্য দগ্ধ হন। প্রাথমিকভাবে দগ্ধদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ সহ সকলেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়রা জানায়, বিস্ফোরণের আওয়াজে আশেপাশের বাড়ির মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

দগ্ধদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায় সকলকে দ্রুত জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পরপরই চিকিৎসকরা তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে উল্লেখ করেন।

মৃত্যুর ক্রম এবং দগ্ধদের অবস্থা

ঘটনার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতদের তালিকা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

  • ২৪ আগস্ট: চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক মাস বয়সী শিশু ইমাম উদ্দিন।
  • ২৫ আগস্ট: মৃত্যুবরণ করেন দগ্ধ পরিবারের নানি, তাহেরা আক্তার (৫০)।
  • ২৮ আগস্ট ভোর ৪টা: মারা যান বাবা হাসান গাজী।
  • ২৮ আগস্ট বেলা ১টা: মারা যান চার বছর বয়সী শিশুকন্যা জান্নাত।

এভাবে মাত্র ছয় দিনের মধ্যে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা চারজনে পৌঁছেছে। আহতদের মধ্যে শিশুটির মা সালমা এবং আরও একজন পরিবারের সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, “এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও আমাদের এলাকায় ঘটেনি। ছোট একটি কম্প্রেসরের বিস্ফোরণ কত বড় বিপর্যয় তৈরি করতে পারে, তা আমরা কখনও কল্পনাও করিনি।”

প্রতিবেশীরা বলছেন, দুর্ঘটনার সময় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন এবং দগ্ধদের উদ্ধারে তারা দ্রুত এগিয়ে এসেছিলেন। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হয়নি।

নিরাপত্তা ও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা

ফ্রিজের কম্প্রেসর বিস্ফোরণ এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “পুরনো ফ্রিজ বা কম্প্রেসর ব্যবহার করার আগে নিয়মিত সার্ভিসিং করা উচিত। বৈদ্যুতিক সমস্যা থাকলে তা অবিলম্বে মেরামত করতে হবে। নাহলে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

এ ধরনের বিস্ফোরণ সাধারণত ঘটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা কম্প্রেসরের অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, “ফ্রিজের কম্প্রেসরের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ বা ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকলে তা বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে। ব্যবহারকারীরা অবশ্যই সময়মতো যন্ত্রের অবস্থা পরীক্ষা করবেন।”

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ভূমিকা

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এই ধরনের দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, “এ ধরনের বিস্ফোরণে দগ্ধদের দ্রুত হাসপাতালে আনা অত্যন্ত জরুরি। না হলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমাদের হাসপাতালে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে আহতদের চিকিৎসায়।”

চিকিৎসকরা আরও বলেছেন, দগ্ধদের শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশের ওপর ভিত্তি করে তাদের চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়। ছোট শিশু এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।

দুর্ঘটনার প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সিদ্ধিরগঞ্জের এই ভয়াবহ ঘটনা পুরো এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে স্থানীয়রা শোক প্রকাশ করছেন এবং দগ্ধ পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনও আহতদের পাশে থেকে তাদের সেবা নিশ্চিত করছে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, এই দুর্ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। ঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ না করলে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে।

এই ভয়াবহ ঘটনায় চারজনের মৃত্যু এবং অনেকে গুরুতরভাবে দগ্ধ হওয়া দেশের জন্য একটি দুঃখজনক ঘটনা। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব কতটা।

বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছেন, যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ওপর চাপ বা ত্রুটি দেখা দিলে তা অবিলম্বে মেরামত করতে হবে। একই সঙ্গে, সবাইকে সচেতন হতে হবে যাতে এমন দুর্ঘটনা পুনরায় না ঘটে।

সিদ্ধিরগঞ্জের এই পরিবার যে শোকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা পুরো সমাজকে সচেতন হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে। আশা করা যায়, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

MAH – 12536 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button