
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায় পৌঁছেছে।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আবারও রেকর্ড স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হবে।
নতুন দাম ও বাজার পরিস্থিতি
বাজুসের তথ্যানুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। এছাড়া:
- ২১ ক্যারেট: ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এর আগে, ১৩ অক্টোবর দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। ২১ ও ১৮ ক্যারেটের দামও পূর্বের তুলনায় কমপক্ষে ২–৩ হাজার টাকা বেড়েছে। চলতি বছর পর্যন্ত স্বর্ণের দাম মোট ৬৫ বার সমন্বয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৭ বার দাম বাড়ানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি গ্রামে ৫০২.৫০ দিরহামে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪,১৪১.৫ ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা, সুদের হার স্থিতিশীলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশের বাজারও আন্তর্জাতিক উত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়িয়েছে। স্বর্ণ শুধুমাত্র অলংকার নয়, এটি বিনিয়োগ ও আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য স্বর্ণ কেনা কিছুটা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বর্ণের চাহিদা এখনো উচ্চ। বিশেষ করে ছোট ও হালকা গহনা ক্রয়ের প্রবণতা বেড়েছে।
মালাবার গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামলাল আহমেদ বলেন, “দাম বেড়েছে, তবে স্বর্ণে মানুষের আস্থা অটুট। অনেকেই এখন কম পরিমাণ কিনছেন, তবে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।”
কানজ জুয়েলসের পরিচালক অর্জুন ধনক জানান, “দাম বাড়ার পরও গহনা কেনার প্রবণতা কমেনি। ক্রেতারা এখন ছোট ও হালকা গহনা বেশি পছন্দ করছেন, বিশেষ করে উপহারের ক্ষেত্রে।”
পরিসংখ্যান ও তুলনা
- ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন দাম: ২ লাখ ১৬,৩৩২ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ২ লাখ ৬,৪৯৯ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১ লাখ ৭৭,০১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১ লাখ ৪৭,৩৫১ টাকা
- চলতি বছরে দাম সমন্বয়: ৬৫ বার (৪৭ বার বৃদ্ধি, ১৮ বার হ্রাস)
- ২০২৪ সালে দাম সমন্বয়: ৬২ বার (৩৫ বার বৃদ্ধি, ২৭ বার হ্রাস)
- রূপার দাম: ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি ৬,২০৫ টাকা, অপরিবর্তিত
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের ধারাবাহিক বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশে স্বর্ণের দামের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে, এবং স্বর্ণ এখন একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বর্ণের দাম বাড়ার ফলে সোনার অলংকার ক্রয়ের প্রবণতা কিছুটা কমতে পারে, তবে বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার কারণে স্বর্ণের চাহিদা স্থিতিশীল থাকবে।
দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে স্বর্ণের দাম নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ভরিতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায় পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, বিনিয়োগকারীর আগ্রহ ও মূল্যস্ফীতির কারণে দাম বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণ এখনও গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে থাকা অব্যাহত থাকবে।
এম আর এম – ১৭৮৫,Signalbd.com