বানিজ্য

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশে এলো ৬৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স

Advertisement

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম ৭ দিনে দেশে এসেছে ৬৯ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯০ লাখ ডলার বেশি।

রেমিট্যান্সের বিস্তারিত তথ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বিশেষ করে ৭ অক্টোবর একদিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে এসেছে মোট ৮২৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স, যা বছর ব্যবধানে ১৪.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনের কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে শ্রমবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের আয়ের বৃদ্ধি এই প্রবাহ বৃদ্ধির মূল কারণ। এছাড়া স্থানীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি ও দ্রুত লেনদেনের সুবিধা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো আরও সহজ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত প্রচেষ্টা এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে।

পূর্ববর্তী রেকর্ড ও তুলনা

গত বছরের একই সময়ে দেশে এসেছে ৬৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহে বেড়েছে ৯০ লাখ ডলার।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে দেশে এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০.৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এটি দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড।

প্রভাব ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, আমদানি খরচ মেটাতে এবং জাতীয় মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।

বিশেষ করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ফলে দেশের অর্থনীতিতে ভোক্তাসামগ্রী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক। তারা বলছেন, বৈশ্বিক মুদ্রার মান, বিদেশে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণের সুবিধা বজায় থাকলে এই প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতেও বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, রেমিট্যান্স মূলত মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপ থেকে আসে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং মালয়েশিয়া বাংলাদেশের প্রধান রেমিট্যান্স উৎস। দেশের অর্থনীতির জন্য এ ধরনের বৈদেশিক আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে স্বচ্ছলতা ও স্থিতিশীলতা আনে। প্রবাসীদের এই অবদান দেশের উন্নয়ন ও জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এবং অর্থনীতির উন্নয়নকে শক্তিশালী রাখবে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওঠানামা এবং বৈদেশিক চাকরির স্থিতিশীলতা রেমিট্যান্স প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

এম আর এম – ১৬৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button