
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারদের নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতার চিত্র নতুন করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীদের হামলায় এক মার্কিন মুসলিম যুবক পিটিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সিএনএনের প্রতিনিধি জেরেমি ডায়মন্ড।
কাতারি বেসরকারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার বরাত দিয়ে জানা যায়, নিহত সাইফুল্লাহ মুসাল্লাতের বাবার সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন সিএনএনের জেরেমি। সেই সময় গাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি দখলদাররা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি নিজের নিরাপদে পালিয়ে আসার ঘটনা বিস্তারিত শেয়ার করেছেন।
জেরেমি ডায়মন্ড লিখেছেন, “আমরা সংবাদটি কভার করতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ আমাদের গাড়ির ওপর হামলা করা হয়। গাড়ির পিছনের জানালা ভেঙে দেওয়া হয়। আমরা বেঁচে বের হওয়ার চেষ্টা করি। এটি পশ্চিম তীরের বাস্তবতা, যেখানে ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন এই ধরনের সহিংসতার মধ্যে জীবন যাপন করছে।”
নিহত মার্কিন নাগরিকের পরিচয় ও পরিবারের বক্তব্য
গত শুক্রবার রামাল্লার সিনজিল শহরে সাইফুল্লাহ মুসাল্লাত (২০) নামের ওই মার্কিন নাগরিককে ইসরায়েলি বসতকারীরা পিটিয়ে হত্যা করে। মুসাল্লাত ফ্লোরিডার ট্যাম্পার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি পারিবারিক কারণে ফিলিস্তিনে এসেছিলেন। তার চাচাতো বোন ফাতমাহ মোহাম্মদ বলেন, “সাইফুল্লাহ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিস্তিনে গিয়েছিল।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, “আমরা পশ্চিম তীরে এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে অবগত।” তবে পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হয়নি। একই ঘটনায় একজন ফিলিস্তিনি—মোহাম্মদ শালাবি নামের—বুলেট আহত হয়ে নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীদের সহিংসতা: একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীদের সহিংসতা বহুদিন ধরেই এক সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিয়মিত অভিযোগ করে আসছে, বসতির লোকজন ফিলিস্তিনি পাড়া-মহল্লায় হামলা চালিয়ে তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এই সহিংসতা রোধের পরিবর্তে ইসরায়েলি সেনারা বসতকারীদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুলি চালায়।
এ ধরনের সহিংসতার ফলে সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিকরা মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভুগছে। পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা, বাড়িঘর ধ্বংস, কৃষি ক্ষতি ও চলাচলে বাধা এই অঞ্চলটির প্রতিদিনের বাস্তবতা।
পশ্চিম তীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক নীতি
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলি বসতকারীদের হামলা ও ইসরায়েলি সেনাদের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জোরালো পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘর্ষের সংকট দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক আলোচনার মধ্যেও পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।
মার্কিন মুসলিম সাইফুল্লাহর হত্যাকাণ্ড: একটি মানবিক ও রাজনৈতিক সংকেত
সাইফুল্লাহ মুসাল্লাতের মতো ফিলিস্তিনে মার্কিন মুসলিম যুবকদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে নতুন করে মনোযোগ আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। মার্কিন নাগরিক হিসেবে তার প্রাণহানি শুধু এক ব্যক্তির জন্য নয়, বরং পশ্চিম তীরে চলমান সহিংসতা ও অবিচারের একটি প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারদের সহিংসতা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ অমানবিকতার দৃষ্টান্ত। সাংবাদিকরা যেমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও তথ্য পৌঁছে দিতে সংগ্রাম করছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
সাইফুল্লাহ মুসাল্লাতের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববাসীকে পশ্চিম তীরের স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতা কমানোর জন্য যৌক্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুই পক্ষের দীর্ঘ দিনের সংঘাত থেকে একটি ন্যায়সঙ্গত, স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করাই মানবতার দাবী।