শিক্ষা

৩৫ বছর পর পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজিতে কুপোকাত দুলু! হাল না ছাড়ার ঘোষণা

Advertisement

নাটোরের বাগাতিপাড়ার ইউপি সদস্য দুলু ৩৫ বছর পর ফেরলেন শিক্ষা জীবনে। ইংরেজিতে ফেল করলেও দমে যাননি। জীবনের অসমাপ্ত অধ্যায় শেষ করার পণ করেছেন তিনি।

বিস্তারিত 

দেলোয়ার হোসেন দুলু, নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার করমদোশী পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ব্যস্ত জীবন, পারিবারিক দায়-দায়িত্ব আর সামাজিক চাপের মাঝেও থেমে থাকেননি তিনি। চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ী দারুল খায়ের সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে।

কিন্তু বহু কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে বাধ সাধে ইংরেজি। ইংরেজিতে ফেল করায় পাশ করেননি তিনি। তবে এই ব্যর্থতায়ও দুলুর স্বপ্নে কোনো ফাটল ধরেনি।

দুলু ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। ১৯৮৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি ও ১৯৮৮ সালে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করেছিলেন। ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেন।

সেই ঘটনার মানসিক আঘাতে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়—পরিবার, পেশা আর সমাজের বাস্তবতা।

অনুপ্রেরণার গল্প 

দুলুর জীবনে শিক্ষা আবার ফিরে আসে সন্তানদের মাধ্যমেই। সন্তানদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে গিয়ে বুঝতে পারেন, নিজেকে শিক্ষিত না করতে পারলে সমাজের সামনে উদাহরণ স্থাপন সম্ভব নয়। গোপনে ভর্তি হন নবম শ্রেণিতে। পরীক্ষার দিন পর্যন্ত আশেপাশের কেউ জানতো না তার এই চেষ্টা সম্পর্কে।

তিনি বলেন, “অনেকেই হাসে, অনেকেই বলে ‘এই বয়সে আবার পড়ালেখা?’ কিন্তু আমি জানি, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। আমার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”

সমাজের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিধ্বনি 

গ্রামের মানুষরা শুরুতে অবাক হলেও এখন অনেকেই দুলুকে বাহবা দিচ্ছেন। অনেক তরুণ এমন সাহসিকতার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “দুলু ভাই শুধু একজন প্রতিনিধি নন, এখন তিনি গ্রামের অনুপ্রেরণা।”

তবে নেতিবাচক কথাও থেমে নেই। কেউ কেউ মনে করছেন, এই বয়সে এতো কষ্ট করে পরীক্ষা দেওয়ার মানে কী? কিন্তু দুলু এসব কথায় কর্ণপাত না করে এগিয়ে চলেছেন নিজের লক্ষ্যপানে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 

ইংরেজিতে ব্যর্থতা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়ছেন না। বলেছেন, “আগামী বছর আবারও পরীক্ষা দেব। ইংরেজি টিউটর নিচ্ছি। এবার ভুলগুলো শুধরে নেব।” শুধু পাশ করাই নয়, তিনি উচ্চশিক্ষার স্বপ্নও দেখেন।

দুলুর লক্ষ্য, “আমি চাই, একদিন ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে। সমাজ যাই বলুক না কেন, আমি থামবো না।”

“ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছিল। এখন সেই স্বপ্নকে আবার বাস্তব করতে চাই”—দেলোয়ার হোসেন দুলু

সারসংক্ষেপ  

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার এক প্রান্তিক গ্রামে ৫২ বছর বয়সে আবারও এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে বসেছিলেন ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলু। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইংরেজিতে ফেল করলেও থেমে থাকছেন না তিনি। আগামী বছর আবার পরীক্ষা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই সংগ্রামী মানুষটি।

দুলুর গল্প শুধু একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং সমাজে শিক্ষার গুরুত্ব এবং জীবনের শেষ না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সমাজ কি তাকে কেবল উৎসাহই দেবে, নাকি তার পথচলায় আরও সঙ্গী হয়ে উঠবে?

এম আর এম – ০২৭১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button