বানিজ্য

মার্কিন কোম্পানিকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

Advertisement

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে আয়োজিত “ইউএস-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল” আলোচনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার, স্থিতিশীলতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির সুযোগ এখন মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত।

Advancing Reform, Resilience and Growth’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (USBBC)। এতে যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা কোম্পানি মেটলাইফ, শেভরন ও এক্সেলেরেট অংশ নেয়।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন—

“বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা, টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়া। আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এসে নতুন বিনিয়োগের সুযোগগুলো কাজে লাগাক।”

তিনি উল্লেখ করেন, শিল্প, প্রযুক্তি, জ্বালানি, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাতে মার্কিন বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণ

সভায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া বাংলাদেশের ছয়জন রাজনৈতিক নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সমঝোতা ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।”

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য, বিশেষ করে রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG) খাতে। একইসাথে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।

২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী—

  • বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার
  • মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছেন।
  • বিশেষ করে গ্যাস, বীমা, প্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতে মার্কিন কোম্পানির উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে।

  • অবকাঠামো: মেগা প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলি টানেল নতুন শিল্প সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
  • প্রযুক্তি খাত: স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম দ্রুত বাড়ছে।
  • কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ: বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ হওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ ব্যাপক।
  • পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি: সৌর ও বায়ুশক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ জরুরি।

প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানের তাৎপর্য

প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানকে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনের বার্তা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

একজন অর্থনীতিবিদ বলেন—
“যদি মার্কিন কোম্পানিগুলো নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসে, তবে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং রপ্তানি আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন ব্যবসায়ী মহল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংস্কার পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। তারা মনে করছে—

  • স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ বিনিয়োগ নিরাপত্তা দেবে।
  • শ্রমবাজারে তরুণ জনশক্তি মার্কিন কোম্পানির জন্য আকর্ষণীয়।
  • দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশ যদি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারে, তবে—

  • কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
  • ডলার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে।
  • প্রযুক্তি ও দক্ষতা স্থানান্তর ঘটবে।
  • শিল্প খাত বৈচিত্র্যময় হবে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ। এটি শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের জন্য এক সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।

MAH – 12998 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button