বানিজ্য

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ অনুমতিতে ইলিশ রপ্তানি করা হয় ভারতে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার প্রতি কেজি দরে এ চালান রপ্তানি করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

ইলিশ রপ্তানির বিস্তারিত

মৎস্য অধিদপ্তর নির্দেশনা অনুযায়ী, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানি শুরু হলো বুধবার থেকে। প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়। এ চালানে ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের মাছ বেশি ছিল বলে জানা গেছে। একটি বাক্সে ৩৮টি ইলিশ মাছের মোট ওজন ধরা হয় ২১ কেজি।

বেনাপোল মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানির জন্য। আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি শেষ করতে হবে।

স্থানীয় বাজারের চিত্র

যশোর শহরের মাছের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দেশে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম চড়া। পাইকারি বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে সেই দাম আরও ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।

কেজি আকারের ইলিশ বাজারে পাওয়া গেলেও তার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩ হাজার টাকারও ওপরে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আড়তদার ও বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম হওয়ায় দাম স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কেন কম দামে রপ্তানি সম্ভব

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানান, সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ সংগ্রহ করা হয়। একসঙ্গে বড় পরিমাণ কেনার ফলে দাম তুলনামূলক কমে আসে। ফলে দেশে খুচরা বাজারের তুলনায় রপ্তানিমূল্য কম হলেও তাদের লোকসান হয় না।

ভারতের বাজারে ইলিশের চাহিদা

দুই বাংলার বাঙালির কাছে ইলিশ শুধু মাছ নয়, আবেগের অংশ। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কলকাতাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। অতিথি আপ্যায়ন কিংবা উৎসবের টেবিলে ইলিশ থাকে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে। এ কারণে প্রতিবছর এই সময়ে ইলিশ রপ্তানি অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

২০১২ সালে উৎপাদন সংকটের কারণে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তবে ২০১৯ সাল থেকে দুর্গাপূজায় সীমিত পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত বছর ২ হাজার ৪২০ টন রপ্তানির অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। ফলে এবার অনুমোদিত কোটা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে ইলিশের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, তারা ইলিশ কিনতে গিয়ে চড়া দামে পড়ছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানি চালু হলে বাজারে মাছের সংকট আরও বেড়ে যায়। তবে সরকার মনে করে, সীমিত পরিমাণ রপ্তানি দুই দেশের সম্পর্কের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বিশেষজ্ঞ মত

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সীমিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি করলে দেশের বাজারে তেমন বড় প্রভাব না পড়লেও বাস্তবে সরবরাহ সংকটের কারণে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। তারা মনে করেন, দেশীয় বাজারকে প্রাধান্য দিয়ে রপ্তানির পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। সামনে আরও কয়েকটি চালান যাবে বলে জানা গেছে। তবে দেশের বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এখন দেখার বিষয়, অনুমোদিত কোটা পূর্ণ হয় কিনা এবং এর প্রভাব কতটা পড়ে দেশের সাধারণ ক্রেতাদের ওপর।

এম আর এম – ১৩৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button