বানিজ্য

কোকোয়ার সংকটে চকলেটের দাম বাড়ছে

প্রস্তাবনা: চকলেটপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ

চকলেটের ভক্তদের জন্য আসছে নতুন ধাক্কা। বিশ্ববাজারে কোকোয়া উৎপাদনে সংকটের কারণে চকলেটের দাম দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা দ্রুতই কমার সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী কয়েক মাস খুচরা বাজারে দাম আরও বাড়তে পারে। তবে ২০২৬ সালের ইস্টারের আগে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।

কেন বাড়ছে চকলেটের দাম?

চকলেটের মূল উপাদান হলো কোকোয়া। কিন্তু গত কয়েক বছরে কোকোয়ার উৎপাদনে নানা কারণে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। প্রধান কারণগুলো হলো—
প্রতিকূল আবহাওয়া: পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান কোকোয়া উৎপাদনকারী দেশগুলোতে (আইভরি কোস্ট ও ঘানা) জলবায়ুর পরিবর্তন ও খরা উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পোকামাকড় ও রোগব্যাধি: কোকোয়া গাছে ভাইরাস ও ফাঙ্গাল রোগের আক্রমণ ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
বিনিয়োগের অভাব: দীর্ঘদিন ধরে কৃষি খাতে বিনিয়োগ না হওয়ায় উৎপাদন প্রযুক্তি উন্নত হয়নি।
সরবরাহ শৃঙ্খলে সংকট: যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা ও শিপিং খরচ বৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে সরবরাহে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববাজারে কোকোয়ার রেকর্ড দাম

২০২৪ সালের শেষ দিকে কোকোয়ার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কোকোয়ার ফিউচার মার্কেটে প্রতি টন দাম ছিল ৮,১৭৭ ডলার, যা আগস্টে কিছুটা কমে ৭,৮৫৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে তিন বছর আগে এই দাম ছিল মাত্র ২,৩৭৪ ডলার

মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব

✔ ভোক্তাদের খরচ বেড়েছে
✔ মিষ্টিজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে
✔ চকলেট প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ বেড়েছে

যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সংগঠন হুইচ এর তথ্য অনুযায়ী, চকলেটজাত পণ্যের দাম ২০২৪ সালে গড়ে ১১% বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হার্শিস কিসেস ব্র্যান্ডের দামও এক বছরে প্রায় ১২% বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

সুইস কোম্পানি লিন্ডট অ্যান্ড স্প্রুংলি-এর প্রধান আদালবের্ট লেকনার বলেছেন,

“কোকোয়ার দাম আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরবে বলে মনে করি না।”

একই মত দিয়েছেন জেপি মর্গান-এর কৃষি পণ্য কৌশলবিদ ট্রেসি অ্যালেন। তিনি বলেন,

“২০২৪ সালের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আমরা এখনো সামলাচ্ছি। পুরো শিল্পক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে, যা ভোক্তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”

শিল্পখাতে প্রভাব: উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে

চকোসুইস, সুইস চকলেট প্রস্তুতকারক সমিতির মুখপাত্র লিডিয়া টোথ বলেন,

“গত দুই বছরে কোকোয়ার দাম চার গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোও চাপের মুখে আছে।”

নির্মাতাদের লাভ কমে গেছে, খুচরা দামের পরিবর্তন ধীরে হয় বলে চকলেটের দামে এখনও সমন্বয় পুরোপুরি হয়নি।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: ইস্টারের আগে কিছুটা স্বস্তি

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের ইস্টার (৫ এপ্রিল)-এর আগে চাহিদা কিছুটা কমবে এবং নতুন ফসল বাজারে আসবে। ইকুয়েডর ও ব্রাজিলের নতুন উৎপাদন সরবরাহ বাড়াবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে দাম প্রতি টন প্রায় ৬,০০০ ডলার বা তার ওপরে থাকতে পারে।

শুল্ক ও করের প্রভাব

ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদ হামাদ হুসেইন বলেন,
✔ আইভরি কোস্ট ও ঘানায় রোগবালাই ও বিনিয়োগের অভাবে উৎপাদন কমেছে
✔ যুক্তরাজ্যে ন্যূনতম মজুরি বাড়ার কারণে ব্যবসার খরচ বেড়েছে
✔ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চকলেটের দামে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে

ভোক্তাদের জন্য সতর্কবার্তা

সব মিলিয়ে ভোক্তাদের জন্য বার্তাটা স্পষ্ট:
✔ চকলেটের দাম আরও কিছুদিন বাড়তি থাকবে
✔ সাশ্রয়ী মূল্যে চকলেট পেতে হলে অফার, ডিসকাউন্ট বা বিকল্প ব্র্যান্ড বেছে নিতে হবে

বিশ্ব চকলেট বাজারের বর্তমান অবস্থা

  • বড় উৎপাদক দেশ: আইভরি কোস্ট (৪০%), ঘানা (২০%), ইকুয়েডর, ব্রাজিল
  • বড় কোম্পানি: লিন্ডট, নেসলে, হার্শি, মার্স
  • ২০২৫ সালের বাজার আকার: প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলার
  • প্রবণতা: প্রিমিয়াম চকলেটের চাহিদা বাড়ছে, ভেজান ও সুগার-ফ্রি চকলেট জনপ্রিয় হচ্ছে

বাংলাদেশের চকলেট বাজার

বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক চকলেট ব্র্যান্ডের দাম বাড়ছে। আমদানি নির্ভর বাজার হওয়ায় ডলার রেট ও শুল্কের প্রভাবও পড়ছে। স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও দাম সমন্বয় করছে।

চকলেটের ভবিষ্যৎ: কেমন হতে পারে দাম?

✔ স্বল্পমেয়াদে দাম বাড়বে
✔ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে
✔ দীর্ঘমেয়াদে দাম আগের মতো কমবে না, কারণ উৎপাদন খরচ ও জলবায়ু ঝুঁকি রয়ে গেছে

MAH – 12466 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button