বাংলাদেশ

চব্বিশ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু

Advertisement

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৬৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন বাকিরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে ৫ জন নারী ও একজন পুরুষ রয়েছেন।

বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে ১০৮ জন, ঢাকা বিভাগের (ঢাকা মহানগর ব্যতীত) ১০২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ৩৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৪৬১ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৭ জনে, যার মধ্যে ৮৬ জন পুরুষ এবং ৮১ জন নারী।

ডেঙ্গুর বিস্তার 

ডেঙ্গু বাংলাদেশে মৌসুমি রোগ হিসেবে প্রতি বছরই দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর প্রকোপ বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগোছালো নগর পরিকল্পনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং অচলাবস্থায় পড়ে থাকা স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে।

২০২২ ও ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটে। গত বছরেই ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল। চলতি বছরও সেই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

প্রভাবিত মানুষ ও চিকিৎসা সেবা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভিড় বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ ব্যাপক।

একজন রোগীর স্বজন জানান, “প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। অনেক সময় বেড পাওয়া যায় না। ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন, কিন্তু রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।”

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো দেরিতে হাসপাতালে আসা। জ্বর শুরু হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক কমে যায়।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশা নিধন কর্মসূচি চালানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।

সরকারের পদক্ষেপ

স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মশক নিধনে কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সিটি করপোরেশনের টিম নিয়মিতভাবে ওষুধ ছিটাচ্ছে এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তবে নাগরিকরা অভিযোগ করছেন, ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম যথেষ্ট জোরদার নয়। অনেক জায়গায় এখনো মশার উপদ্রব আগের মতোই আছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে ঘরের ভেতর-বাইরের পানি জমে থাকা স্থানগুলো পরিষ্কার করতে হবে। যেমন: ফুলের টব, গাড়ির টায়ার, ফ্রিজের নিচের ট্রে, এয়ারকুলার, খালি বোতল বা টিন ইত্যাদিতে পানি জমে থাকলে নিয়মিত তা ফেলে দিতে হবে।

এছাড়া সকাল-বিকেলে মশা বেশি সক্রিয় থাকে বলে এ সময় মশারি ব্যবহার ও শরীর ঢেকে রাখার মতো পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ আরও সংক্রমণ বাড়তে পারে।

তারা মনে করেন, এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু এবং শত শত মানুষের নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এ রোগের ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করে তুলছে। সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিকদের নিজস্ব উদ্যোগই এখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

এম আর এম – ১৪০০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button