৩ কার্গো এলএনজি ও ২ লাখ ৪৫ হাজার টন সার কিনবে সরকার

সরকার দেশের জ্বালানি ও কৃষি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তিনটি এলএনজি কার্গো, দুই লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সার এবং ১৫ হাজার মেট্রিক টন রক সালফার সংগ্রহের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ৩২তম বৈঠকে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও সার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তিনটি এলএনজি কার্গো, দুই লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সার এবং ১৫ হাজার মেট্রিক টন রক সালফার ক্রয়ের প্রস্তাব।
সরকারি ক্রয় অনুমোদনের বিস্তারিত
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি ও সার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হলো মূল্য স্থিতিশীল রাখা, যাতে সাধারণ মানুষ এবং শিল্পখাত উভয়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারের ক্রয় প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের মেসার্স টোটাল এনার্জিজ গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে তিনটি এলএনজি কার্গো সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেকটি কার্গোর জন্য দাম নির্ধারিত হয়েছে যথাক্রমে ১১.৩৪, ১১.৪৪ এবং ১১.৫৪ মার্কিন ডলারের এমএমবিটিইউ ভিত্তিতে।
সার ক্রয়ের পরিকল্পনা
শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উৎস থেকে মোট দুই লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন সার সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া, এমওপি, ডিএপি ও টিএসপি সার। বাংলাদেশের কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া, জেএসসি ফরেন ইকোনমিক কর্পোরেশন থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার, মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস থেকে ডিএপি ও টিএসপি সার সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার ক্রয় করা হবে।
সরকার এই সার ক্রয় প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ করেছে, যাতে দেশের কৃষকদের জন্য তুলনামূলকভাবে যুক্তিসঙ্গত মূল্যে সার সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
রক সালফার সংগ্রহ
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকার ১৫ হাজার মেট্রিক টন রক সালফার সংগ্রহ করবে। এটি ফার্টিলাইজার উৎপাদন এবং বিভিন্ন শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রক সালফারের ক্রয় নিশ্চিত হলে দেশের সার উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
প্রভাব ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব
এই সিদ্ধান্ত দেশের জ্বালানি ও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। যথাযথ সময়ে এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও গৃহস্থালি চাহিদা মেটানো সহজ হবে। এছাড়া সার ক্রয় ও সরবরাহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের পরিকল্পিত ক্রয় সরকারকে বাজারের অস্থিরতা এবং মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করবে। একই সঙ্গে কৃষকরা মৌসুমের সময় পর্যাপ্ত সার পাবে, যা ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকারের যুক্তি
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকারের লক্ষ্য শুধুমাত্র ক্রয় নয়, বরং দেশের জ্বালানি ও সার সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রয়াস হলো সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ সরবরাহ করা, যাতে শিল্প ও কৃষি খাত উভয়ের ওপর প্রভাব না পড়ে।”
তিনি জানিয়েছেন, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যুক্তিসঙ্গত মূল্যে এলএনজি ও সার সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
পরবর্তী ধাপ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের এই ক্রয় সিদ্ধান্ত দেশের জ্বালানি ও সার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামী কয়েক মাসে এই এলএনজি ও সার আসার পর দেশীয় বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি ও শিল্প খাতে এর প্রভাব ইতিবাচক হবে, এবং মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে। তবে বাজারের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পনার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
সরকারের এই ক্রয় উদ্যোগ দেশের জ্বালানি ও কৃষি খাতের স্থিতিশীলতা এবং চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা পরবর্তী সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ০৯৫২, Signalbd.com