যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফের বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ এবং অর্থনৈতিক নীতির প্রতিক্রিয়ায়, প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে—তারা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ১০০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগ করবে। এর ফলে অ্যাপলের মোট ঘোষিত বিনিয়োগ দাঁড়ালো ৬০০ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিনিয়োগের ফলে চিপ এবং সেমিকন্ডাক্টর পণ্যে আরোপিত ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এড়াতে পারবে অ্যাপল। এছাড়া দেশজ উৎপাদন বাড়লে আইফোন ও অন্যান্য অ্যাপল পণ্যের দাম হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প-টিম কুক সাক্ষাৎ, ঘোষণা ওভাল অফিস থেকেই
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অ্যাপল সিইও টিম কুক একসঙ্গে উপস্থিত হন। এই আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন:
“অ্যাপলের এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য সম্মানের। তারা দেশে ফিরছে। আমরা একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গর্বিত। এই ধরণের উদ্যোগ আমাদের কর্মসংস্থানে গতি আনবে।”
অন্যদিকে টিম কুক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা গড়তে অ্যাপলের ভূমিকা থাকবে নেতৃস্থানীয়। দেশেই উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলায় নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।”
কোন খাতে কত বিনিয়োগ?
নতুন করে ঘোষিত ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চিপ উৎপাদন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যয় হবে। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে ছিল:
- গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D): ১৫০ বিলিয়ন ডলার
- কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ: ১০০ বিলিয়ন ডলার
- নতুন ডেটা সেন্টার ও ক্যাম্পাস নির্মাণ: ১০০ বিলিয়ন ডলার
- পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও টেকসই উৎপাদন: ৫০ বিলিয়ন ডলার
- চিপ উৎপাদন ও মেশিন লার্নিং: ১০০ বিলিয়ন ডলার
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছে অ্যাপল
অ্যাপলের অধিকাংশ পণ্য—বিশেষ করে আইফোন, আইপ্যাড ও ম্যাকবুক—দীর্ঘদিন ধরে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতে উৎপাদিত হয়ে আসছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ায় অ্যাপল ধীরে ধীরে উৎপাদনের ঘাঁটি দেশের ভেতরে স্থানান্তর করছে।
এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ওহাইয়োতে অ্যাপল নতুন করে চিপ ও যন্ত্রাংশ কারখানা স্থাপন শুরু করেছে। নতুন বিনিয়োগে আরও ১০টির বেশি স্থানে উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
শুল্ক এড়ানোর মাধ্যমে দাম কমার সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনের ফলে অ্যাপলকে চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০০% আমদানি শুল্ক দিতে হবে না। এতে করে উৎপাদন খরচ কমবে এবং ভবিষ্যতে আইফোন ও অন্যান্য অ্যাপল পণ্যের মূল্য হ্রাস পেতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অ্যান ই. হ্যারিসন বলেন:
“চার দশকে প্রযুক্তির প্রভাবে আমেরিকান শ্রমিকরা কর্মহীনতায় ভুগেছে। এই বিনিয়োগ মার্কিন কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং প্রযুক্তিতে দেশের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।”
কর্মসংস্থানে অভাবনীয় সুযোগ
এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, অ্যাপলের এই বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
- ম্যানুফ্যাকচারিং ও লজিস্টিক
- আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ
- কাস্টমার সার্ভিস ও রিটেইল ম্যানেজমেন্ট
বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে পরিবর্তন
অ্যাপলের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে নয়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ ব্যবস্থাতেও এক বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য টেক জায়ান্টও এই বিনিয়োগের প্রভাবে নিজ নিজ দেশে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অগ্রাধিকার
অ্যাপল চায় ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এআই ভিত্তিক পণ্য ও পরিষেবায় নেতৃত্ব দিতে। তাই নতুন এই বিনিয়োগে এআই রিসার্চ ল্যাব, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অটোনমাস সিস্টেমসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সারসংক্ষেপ
| বিনিয়োগের পরিমাণ | ৬০০ বিলিয়ন ডলার (মোট) |
|---|---|
| নতুন বিনিয়োগ | ১০০ বিলিয়ন ডলার |
| প্রধান খাত | চিপ, AI, কর্মসংস্থান |
| কর্মসংস্থান | ৫ লাখের বেশি |
| দাম কমার সম্ভাবনা | হ্যাঁ, শুল্ক ছাড়ে খরচ কমবে |
| উৎপাদন স্থান | যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক রাজ্য |
| বিদ্যমান উৎপাদন | চীন, ভিয়েতনাম, ভারত |
MAH – 12185 , Signalbd.com



