আঞ্চলিক

রাজধানীতে হেলে পড়ল বহুতল ভবন, এলাকায় আতঙ্ক

Advertisement

রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বহুতল ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরের দিকে স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন হাজী মোয়াজ্জেম স্কুলের পেছনে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত পৌঁছে যায় এবং ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ছয়তলা ভবনটি হঠাৎ করেই পাশের সাততলা ভবনের দিকে হেলে পড়ে। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বিস্তারিত

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ভবনটিতে ফাটলের কিছু চিহ্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। পরে দুপুরে ভবনটি ধীরে ধীরে পাশের ভবনের দিকে হেলে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের জরুরি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।

ডেমরা থানা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনটির ভেতরে থাকা বাসিন্দাদের সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ভবনটি পুরোপুরি খালি করে দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভবনটি যে কোনো সময় আরও ধসে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কী বলছে ফায়ার সার্ভিস ও রাজউক?

ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানিয়েছেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তারা আশপাশের মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন, তারা ভবনের গঠন ও নিরাপত্তা যাচাই করবেন।

রাজউকের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, নিম্নমানের মাটি, অপরিকল্পিত নির্মাণ ও অতিরিক্ত চাপের কারণে ভবনটির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বিস্তারিত তদন্তের পর তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এলাকাবাসীর আতঙ্ক ও ক্ষোভ

এই ঘটনার পর ডেমরা এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, আশেপাশের ভবনগুলোও যে নিরাপদ তা তারা আর নিশ্চিত নন। অনেক বাসিন্দা জরুরি ভিত্তিতে এলাকা ছাড়ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে থাকি। জায়গার সংকট আর গাফিলতির কারণে যত্রতত্র বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে। প্রশাসন যদি আগে ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকের মতো ঘটনা ঘটত না।”

অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছিল

রাজধানীতে এর আগেও কয়েকটি ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে মগবাজার ও ২০২২ সালে মিরপুর এলাকায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই মূল কারণ হিসেবে দেখা গেছে অনিয়ন্ত্রিত ভবন নির্মাণ, নরম মাটি এবং মানহীন প্রকৌশল কাজ।

এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরপরই রাজউক ও সিটি করপোরেশন কিছু সময়ের জন্য তৎপর হলেও পরে আবার ঢিলেঢালা হয়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে করণীয়

নির্মাণ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। তারা বলছেন, কোনো ভবন নির্মাণের আগে মাটির গুণগত মান যাচাই করা এবং নিয়মিত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা উচিত।

ভবন নির্মাণের প্রতিটি ধাপে প্রকৌশলীদের সঠিক তত্ত্বাবধান এবং সরকারি সংস্থার কঠোর নজরদারি ছাড়া ভবিষ্যতে এমন বিপদ এড়ানো সম্ভব নয়।

প্রশাসনের সতর্কবার্তা

রাজউক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হেলে পড়া ভবনটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। একইসঙ্গে আশেপাশের অন্য ভবনগুলোও পরীক্ষা করে দেখা হবে।

পুলিশ স্থানীয়দের শান্ত থাকতে এবং গুজবে কান না দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

ডেমরার এই বহুতল ভবন হেলে পড়ার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজধানীর ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা এবং পরিকল্পনার ঘাটতি নিয়ে। এখন দেখার বিষয়, রাজউক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার পর কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেয়। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যাতে আর কোনো মানুষের জীবনের জন্য হুমকি না হয়, সে ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা হবে।

এম আর এম – ০৫৪০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button