বানিজ্য

জনতা ব্যাংকের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা সফলভাবে সম্পন্ন

Advertisement

রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) গত রোববার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মতিঝিলস্থ এই অনুষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুহ. ফজলুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জনতা ব্যাংকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি

সভায় জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ও গত বছরের অর্জনসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের শেষের দিকে ব্যাংকের মোট আমানত ১ লাখ ৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫.৪৯ শতাংশ অর্জন করেছে। সম্পদের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।

এই বৃদ্ধি ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বাজারে তার দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, “জনতা ব্যাংক দেশের আর্থিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আমরা উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

পরিচালনা পর্ষদের বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জনতা ব্যাংকের পরিচালক বদরে মুনির ফেরদৌস, মো. আব্দুস সবুর, আব্দুল মজিদ শেখ, এ কে এম খবির উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল সরকার, মো. শাহাদাৎ হোসেন, মো. আহসান কবীর, মো. কাউসার আলম ও মো. ওবায়দুল হক সভায় অংশগ্রহণ করেন। তারা ব্যাংকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রাহকসেবা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

তারা জানান, ভবিষ্যতে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণ, গ্রামীণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ কার্যক্রম, এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে আরও জোর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের সুবিধা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জনতা ব্যাংকের ইতিহাস ও গুরুত্ব

জনতা ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন একটি শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এই ব্যাংক। বিশেষ করে জনতা ব্যাংক গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি খাত ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছে।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত জনতা ব্যাংক দেশে আর্থিক সেবায় স্বনামধন্য হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সব জেলায় ব্যাংকের শাখা রয়েছে, যা গ্রাহকদের কাছে সহজলভ্য ও বিশ্বাসযোগ্য সেবা নিশ্চিত করে।

জনতা ব্যাংকের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে ভূমিকা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, যেখানে জনতা ব্যাংকের অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর আর্থিক সক্ষমতা ও কার্যক্রম দেশীয় অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে সহায়ক।

সরকারের অর্থনৈতিক নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে জনতা ব্যাংক বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। ফলে দেশজুড়ে বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়নে ব্যাংকের অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংকের আমানত ও সম্পদের ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দেশের আর্থিক খাতের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে উঠছে।

জনতা ব্যাংকের ডিজিটাল রূপান্তর

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনতা ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন এবং প্রযুক্তির সর্বাধুনিক ব্যবহারে কাজ করছে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন আধুনিক সেবা গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতে ব্যাংক অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

ব্যাংকের ডিজিটাল রূপান্তর কর্মসূচি গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দ্রুত ও নিরাপদ করার পাশাপাশি কাগজবিহীন সেবা নিশ্চিত করছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকিং সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জনতা ব্যাংকের গ্রাহকসেবা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

জনতা ব্যাংক শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাতেও সাফল্য অর্জন করছে। ব্যাংক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, এবং সামাজিক কল্যাণমূলক নানা প্রকল্পে অর্থায়ন ও অংশগ্রহণ করে আসছে।

বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ক্ষমতায়ন, এবং যুব উদ্যোক্তা সহায়তায় জনতা ব্যাংকের কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রশংসিত। এর ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাংকের অবদান বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনতা ব্যাংকের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় উঠে এসেছে ব্যাংকের শক্তিশালী আর্থিক অবস্থা, সফল কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ব্যাংক দ্রুত পরিবর্তিত আর্থিক বাজারে টিকে থাকার জন্য উদ্ভাবনী এবং প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জনতা ব্যাংকের এই অঙ্গীকার ও কার্যক্রম দেশের অর্থনীতিকে আরও মজবুত করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জনতা ব্যাংকের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম গতিশীল ও স্থিতিশীল রয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং, গ্রাহকসেবা, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতায় ব্যাংক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক নতুন দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জনতা ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আগামীতেও ব্যাংক আধুনিক প্রযুক্তি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রস্তুত।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button