
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া আমেরিকার পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার রফতানিতে ১৯% শুল্ক আরোপ করবে। এই চুক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ট্রাম্পের ঘোষণা ও চুক্তির মূল দিকসমূহ
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে চুক্তির ‘চূড়ান্ত’ হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর সঙ্গে আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছানো হয়েছে। ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া আমেরিকার পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না, অথচ যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯% শুল্ক আরোপ করবে।
এছাড়াও, ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষি পণ্য এবং ৫০টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বোয়িং বিমানগুলোর বেশিরভাগ ৭৭৭ মডেলের হবে।
বাণিজ্য চুক্তির প্রেক্ষাপট ও প্রভাব
গত বছর ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলারের তামা রফতানি করেছিল, যা অন্যান্য প্রধান সরবরাহকারী দেশ যেমন চিলি (৬ বিলিয়ন ডলার) এবং কানাডার (৪ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় অনেক কম। ট্রাম্পের প্রশাসন গত এপ্রিল মাসে ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ৩২% শুল্ক আরোপ করেছিল, কিন্তু পরে তা স্থগিত করে। বর্তমানে, আগস্ট ১ থেকে কিছু দেশে ১০% বা তার বেশি শুল্ক আরোপের কথা ছিল, যা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ‘ইন্দোনেশিয়া শুল্ক বসায় না, তারা এখানে শুল্ক দেয়। আমরা অসমতাকে নিজেদের পক্ষেই আনছি।’ এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের বাজারের শুল্কনীতি শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে।
চুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব ও ব্যবসায়িক প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী উদ্বিগ্ন। বিদেশে উৎপাদিত পণ্যের ওপর হঠাৎ করে উচ্চ শুল্ক আরোপের আশঙ্কা ব্যবসা স্থবির করে দিয়েছে। তবে ট্রাম্প মনে করেন, কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করলে এই ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে এটি সহজ নয়। উৎপাদন ব্যবস্থা স্থানান্তরে কয়েক বছর সময় এবং ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন, যার ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
ইন্দোনেশিয়া আমেরিকার ২৩তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যার মধ্যে পোশাক ও জুতো শীর্ষ। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় আমেরিকার রফতানি হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, প্রধানত তেলবীজ, শস্য এবং পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
ট্রাম্পের প্রশাসন বর্তমানে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি এ ধরণের চুক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন প্রবণতা গড়ে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি কেবল দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককেই নয়, সমগ্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করবে। বাণিজ্যিক শুল্ক ও বিনিয়োগের দিক থেকে এটি একটি মাইলফলক।
সংক্ষিপ্ত সারাংশ
- চুক্তির ঘোষণা: ১৫ জুলাই ২০২৫, ট্রাম্প ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্র-ইন্দোনেশিয়া বাণিজ্য চুক্তি।
- শুল্ক নীতি: ইন্দোনেশিয়া আমেরিকান পণ্যে শুল্ক আরোপ বন্ধ করবে, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯% শুল্ক আরোপ করবে।
- বিমান কেনা: ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
- বাণিজ্য পরিসংখ্যান: ইন্দোনেশিয়া আমেরিকার ২৩তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
- ব্যবসায়িক প্রতিক্রিয়া: নতুন শুল্ক নীতির কারণে উদ্বেগ, তবে দেশীয় উৎপাদনে স্থানান্তর আশা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত এই বাণিজ্য চুক্তি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন প্রভাব ফেলবে। যদিও চুক্তির কিছু শর্ত এখনও স্পষ্ট হয়নি এবং ইন্দোনেশিয়ার সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মেলেনি, তবুও এটি বাণিজ্য নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের বড় চুক্তি দুই দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।